এলিয়েন।
তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#পর্ব_৪_৫

আজ কলেজে এসে কোথাও হৃদ কে দেখিনি।
দু চোখ আমার বার বার পর্যবেক্ষণ করে যখন ক্লাসের দিকে পা বাড়ালাম।

ঠিক তখনই যুথী হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আমাকে বল্লো আরফা আরফা,

-কিরে এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন?
-তোকে একটা কথা বলতে এলাম
-তাতো বুঝতেই পারছি,কিন্তু এইভাবে দৌড়ে আসলি কেন?আমি কি চলে যাচ্ছি নাকি কোথাও?

-অত কথা বলিস না,
আমার কথা টা শোন আগে।
-হুম বল,
-আই এম ইন লাভ।
-বাহ্ এটা তো ভালো খবর।
-হুম,
-তো কে সেই মহা মানব যে কিনা আমার বান্ধবীর মন চুরি করেছে।
নাম টা শুনি।

-সে আর কেউ নয় রে দোস্ত,তোরই ভাই হৃদ।

কথা টা বলেই যুথী লজ্জায় ওর দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেল্লো।

আর ওর কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে টুপ করে মাটিতে পড়লাম।

কি বলছে এই মেয়ে।

-ওই,কি বলছিস তুই?
-হ্যাঁ রে আমি ঠিকই বলছি,
আমি জানি হৃদ একটু অন্য রকম।যাকে এ যুগের ছেলে মেয়েরা বলবে ক্ষ্যাত।

কিন্তু আমার কাছে ওমন ছেলেই পছন্দ।
আমি ওকে পরিবর্তন করে নেবো।
তুই শুধু আমার কথা টা ওকে বলে দে প্লিজ।
প্লিজ প্লিজ প্লিজ দোস্ত।তুই আমাদের রিলেশন টা করে দে।

-যুথীইই
-হুম বল,
-তুই পাগল হয়ে গেছিস।জাস্ট পাগল।

কথা টা বলেই আমি যুথীকে ফেলে একবারে বাসায়ই চলে আসলাম।

বাসায় এসে তাড়াতাড়ি করে হৃদকে ফোন দিলাম।
কিন্তু হৃদ ফোন তুলছেনা।
উফফ ও আজ কলেজেও আসেনি,আবার ফোন ও ধরছেনা।
আজ জরিনা সেজে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
কেন যে জরিনা সাজতে গেলাম।এখন ফোন রিসিভ করলেও জিজ্ঞেস করতে পারবোনা যে কেন ও কলেজে আসেনি।

থাক,তবুও তো জানা যাবে ও কেমন আছে।
কিন্তু ফোন টাই তো রিসিভ করছেনা।

রিং বাজতে বাজতে অবশেষে এলিয়েন টা ফোন রিসিভ করেছে।




-কই ছিলেন আপনে?ফোন কেন রিসিভ করেন নাই?
ওহ না সরি,কোথায় ছিলেন আপনি?ফোন কেন রিসিভ করছিলেন না?

-আরে আমি আজ একটু ব্যস্ত।
তাই রিসিভ করতে পারিনি।তুমি কেমন আছো জরিনা?
-ভালো আছি।
-আজ কি কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে?
-হ্যাঁ।

-আচ্ছা শোনো,আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো।
আমি একটু আরফাদের বাসায় যাচ্ছি।
-আরফা?
-ওই যে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে আমার বাবা মা।
-ওহ।
-ওই বাসায় কেন?
-গিয়ে এসে তারপর সব বলি?

-আচ্ছা।
-তাহলে এখন রাখছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।

এলিয়েনটা আমাদের বাসায় কেন আসছে কে জানে।

আসলে হৃদের জন্য আমার যত টুকু টান আছে সেটা হচ্ছে মায়া।
এ ছাড়া আর কিছু নয়।
ভালবাসা তো অন্য জিনিষ।তার প্রতি আমার ভালবাসা টা হবেনা হয়তো কোন দিনই।
কারণ সে আমার স্বপ্ন পুরুষ থেকে একদম আলাদা।পুরোপুরি বিপরীত মানুষ সে।
কোন ভাবেই তাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে মেনে নেয়া সম্ভব না।

কিছু ক্ষণ পর আন্টি আর হৃদ আমাদের বাসায় আসে।

আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলে আমাকে ডাকেন তারা।আমি গিয়ে হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলি।

কথার এক পর্যায়ে এলিয়েন টা আমাকে ডেকে বলে,আরফা চলো তোমার রুমে যাই।

আমি কিভাবে এখন সবার সামনে তাকে না করি।
রাগ হচ্ছে এলিয়েন টার উপর।তবুও নিয়ে গেলাম আমার রুমে।

-হুম,বসুন।
-বাহ্ তোমার রুম টা তো খুব সুন্দর।
-এই প্রথম এলেন নাকি?
-না আরেক বার মনে হয় এসেছিলাম কিন্তু এত সুন্দর ভাবে গোছানো ছিলোনা।
-হুম গুছিয়েছি।
আমার গোছানো সব কিছু পছন্দ।
-আর জীবন সঙ্গী কেমন পছন্দ?
-এই ধরুন স্মার্ট,হ্যান্ডসাম,কিউট এ সব কিছুই থাকতে হবে ওর মধ্যে।
যা আপনার মাঝে এর কিছুই নেই।

-হ্যাঁ আমি জানি।
সব মেয়েদেরই একটা স্বপ্ন থাকে তার ভবিষ্যৎ বরকে নিয়ে।তোমারও থাকাটা স্বাভাবিক।

কিন্তু আন্টি আংকেল,মা বাবা যে আমাদের দুজনের..

-হ্যাঁ আমি জানি।
কিন্তু দেখুন,আমার সাথে আপনি যান না।
আপনার সাথে আমাকে মানায় না।
আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
আমি আমার মা বাবাকে বলেছি।
আপনি আপনার মা বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলুন।

আমার কথা গুলো শুনে হৃদের মুখ টা কালো হয়ে গেলেও খুব মায়াবী একটা হাসি দিয়ে আমাকে ও বল্লো,

-আমিও চাইনা জোর করে তোমাকে নিয়ে জীবন সাজাতে।
বাবা মা তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছেন।

মা যখনই একটা নিজের জন্য নতুন শাড়ী কিনেছেন সাথে তোমার জন্যও একটা কিনেছেন।

তোমার জন্য কিছু গহনাও গড়ে রেখেছেন।

কিভাবে আমি না করবো তাদের বুঝতে পারছিনা।

-আপনি বলবেন আমার আপনাকে পছন্দ না।
আমি চাইনা আপনাকে বিয়ে করতে।

-সমস্যা নেই।তুমি চিন্তা করোনা,তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এ বিয়ে হবেনা।
ভালো থেকো।
মন দিয়ে পড়াশোনা করো।দোয়া করি তুমি যেন তোমার স্বপ্নের মত একজন জীবন সঙ্গী পাও।

-আপনিও।

সেদিন হৃদ চলে যায়।

দু দিন পর আম্মু আমার রুমে এসে আমাকে জানায়,

-শেষ পর্যন্ত তোর ইচ্ছেই পূরণ হলো।
-কি ইচ্ছে?
-হৃদ নাকি তোকে বিয়ে করতে পারবেনা।
-মানে?
-ও সবাইকে বিয়ের জন্য না করেছে।ও নাকি তোকে বোনের মতই দেখে।তোকে নাকি স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবেনা।

-ওহ।সবাই কি বল্লো?
-কি আর বলবে,আফসানা তো কেঁদে কেঁদে অস্থির।
কথাই বলেনা দু দিন যাবত কেউ হৃদের সাথে।
খেতেও দেয় না কেউ।
রান্না করে রেখে দেয়।হৃদও হাত দিয়ে বেড়ে খায়না।

এই চলছে।

যা এবার তুই নিজে পছন্দ করে বিয়ে কর।
আমরা আর কোন ছেলে দেখবোনা তোর জন্য।

আম্মু চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেলো।

এলিয়েন টা আমার কথা বলেনি তাহলে।নিজের সবার চোখে খারাপ হয়ে গেলো।

যাইহোক,বিয়েটা তো ভেঙেছে।আজ তো আমার খুশি হবার কথা কিন্তু আমি কেন খুশি হতে পারছিনা।

এদিকে জরিনা সেজে আমি হৃদকে মেসেজ দেই।
হৃদ আমাকে মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে ডিরেক্ট কল দেয়।

আর কল দিয়ে কাঁদতে থাকে।

শুনেছি ছেলে মানুষ সহজে কাঁদেনা।
ও আজ কাঁদছে কেন তাহলে?

-কি হয়েছে কাঁদছেন কেন?

-আমার বিয়েটা ভেঙে গেছেরে জরিনা।

-তাতে কি?তাই বলে এই ভাবে কাঁদতে হবে?

-আমি আমার জন্য কাঁদছিনা।
কাঁদছি দুই পরিবারের মানুষ গুলোর জন্য।কতই না কষ্ট পেয়েছেন তারা।

আমি হৃদকে বুঝালাম।
শান্তনা দিলাম।
বললাম,এসব বাদ দিয়ে পড়াশোনায় যেন মন দেয়।

হৃদ প্রায় এক সপ্তাহ হয় কলেজে আসেনা।

আমি কলেজে এসে বসে আছি।
হঠাৎ আমার বান্ধবীরা আমাকে ডেকে বলে, আরফা দেখ দেখ।

-কি দেখবো?

পেছনে তাকিয়ে আমি হা হয়ে যাই।

এ কি দেখছি আমি.

আমার এক বান্ধবী আমার চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলে এভাবে কি দেখছিস?

-ওই বল তো ছেলেটা কে?
আমি কি কিছু ভুল দেখছি?

-না না তুই একদম ঠিক দেখছিস।
ওটা  আর কেউ নয় তোর ভাই হৃদ ই।
হৃদকে তো চেনাই যাচ্ছেনা।

ও তো আর আগের হৃদ নেই।
পুরোপুরি চেঞ্জ।

উফফ কি স্মার্ট লাগছে আজ হৃদকে।

কি তার চুলের স্টাইল,কি ড্রেসাপ।

একটা ছেলে এত কিউট হয় কি করে?

আমার একেক বান্ধবী একেক টা কথা বলে যাচ্ছে।

আর হৃদ ধীরেধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।

আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই হৃদ একটা হাসি দিয়ে ওর পেছন থেকে একটা মেয়েকে হাত ধরে আমার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বল্লো,

-দেখো তো ওকে চেনো কিনা,

#পর্ব_৫

আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই হৃদ একটা হাসি দিয়ে ওর পেছন থেকে একটা মেয়েকে হাত ধরে আমার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বল্লো,

-দেখো তো ওকে চেনো কিনা,

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,
যুথী তুই?

-সারপ্রাইজ।
-আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-দেখতো তোর ভাইকে কেমন লাগছে।
চেনা যায়?
পুরোই চেঞ্জড না?

-হুম একদম।
-দেখেছিস,বলেছিলাম না, হৃদ ওর ভালবাসার মানুষ টার জন্য নিজেকে পুরো বদলে ফেলবে?
-তারমানে তুই...

-হ্যাঁ ঠিক ধরেছিস।
-আমাকে কেমন লাগছে বলো তো আরফা?

-হুম ভালো।
আচ্ছা আমি আসছি।
-আরে শোন না,কোথায় যাচ্ছিস?
-বাসায় যাবো।
-একটা থ্যাংক্স তো দিতে দিবি অন্তত।
-থ্যাংক্স?কিসের জন্য?
-এই যে তুই আমার বান্ধবী না হলে আমি হৃদকে চিনতাম না।
আর হৃদকে না চিনলে ওকে পেতামও না।
থ্যাংক্স দোস্ত।

-ওহ,আচ্ছা।
আচ্ছা তোরা থাক আমি আসছি।

আমি ওদের ওখানে রেখেই বাসায় চলে আসি।

-কিরে এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে?
-ভালো লাগছিলোনা তাই।
-ওহ।যা তাহলে ফ্রেশ হয়ে নে।
-হুম যাচ্ছি।

ফ্রেশ হয়ে খাটে গা এলিয়ে দিলাম।
কি যেন নেই নেই মনে হচ্ছে আজ।
চারপাশ তাকিয়ে দেখলাম,সবই তো আছে।
তাহলে কি নেই?
কেন এই শূন্যতা অনুভব করছি?

মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলাম হৃদের নাম্বার।
হৃদ ফোন ধরছেনা।
মেসেজ দিলাম,
মেসেজেরও কোন রিপ্লাই নেই।
মানুষ অল্প কিছু সময়ের মাঝে এতটা পরিবর্তন হতে পারে?
আমার কলও ধরছেনা।

অনেক বার ট্রাই করার পর হৃদ আমাকে কল ব্যাক করলো।

-এত বিজি আপনি?একটা বার ফোনও দিলেন না।
আর না কোন মেসেজ।
কিসের এত ব্যস্ততা আপনার?

-জরিনা,তুমি আমার একজন ভালো ফ্রেন্ড।কিন্তু কথাটা ঠিক কিভাবে তোমাকে বলবো বুঝতে পারছিনা।

-কি এমন কথা যা বলার জন্য এত সংকোচ বোধ করছেন।
-না আসলে,শোনো,
তুমি কিছু মনে করোনা আমি আর তোমার সাথে কথা বলা কন্টিনিউ করতে পারবোনা।

-মানে কি?
-মানে হচ্ছে,আমি আর তোমার সাথে কথা বলবোনা আজকের পর থেকে।

-কেন বলবেন না?
কি করেছি আমি?

-তুমি কিছু করোনি তবে আমার লাইলে কেউ একজন এসেছে যে কিনা চায়না আমি অন্য কোন মেয়ের সাথে কোন প্রকার কথা বলি।

-বাহ্ পুরুষ মানুষ এরকমই,দু দিন যেতে না যেতেই একজন কে ভুলে আরেকজনকে খুঁজে নিতে পারে।

-ঠিক বুঝলাম না,কি বললে তুমি।
তুমি আমার ফ্রেন্ড,লাভার না।
আর তোমাকে ভুলে আরেকজনকে খুঁজে নিলাম মানে?

-আমি আমার কথা বলিনি,
আমি বলেছি আপনার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তার কথা।
তাকে ভুলতে আপনার দু দিনও সময় লাগলোনা,আবার জড়িয়ে গেছেন আরেক জনের সাথে।

-ওহ আরফার কথা বলছো,
ও তো আমাকে লাইক করেনা।তাছাড়া যার কাছে আমার দাম নেই,তার মূল্য আমার কাছেও নেই।
ওকে মনে রেখেই বা কি লাভ।

আর আমি ওর থেকেও বেটার কাউকে জীবনে পেয়েছি।
যে আমাকে পাগলের মত ভালবাসে।

-ওহ তাই?আর এমনই ভালবাসে যে তার কথায় আজ আমাদের বন্ধুত্বও মাটি চাপা দিতে আপনি দ্বিধাবোধ করছেন না।

-দেখো,তুমি আমার বন্ধু।
আর ও আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ।ওকে তো আমি কষ্ট দিতে পারিনা।

-আমরা কথা বললে ও তো আর জানছেনা।
আপনি ওকে না জানালেই পারেন।

-সরি জরিনা,আমি ওকে ঠকাতে পারবোনা।
আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও।
আমি তোমাকে ব্লক লিস্টে রাখলাম।
ভালো থেকো।তোমার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো।

-শুনুন শুনুন,

হৃদ আমাকে কথা শেষ করতে দেয় নি।
তার আগেই লাইন কেটে দিয়ে আমার নাম্বার ব্লক করে দেয়।

এলিয়েন টা আসলেই এলিয়েন।
দয়া মায়া কিচ্ছু নাই।এত দিনের বন্ধুত্ব টাকে এভাবে শেষ করে দিলো।

ও না হয় স্বার্থপর বুঝলাম,
কিন্তু আমি?
আমি তো ওর থেকেও বেশি খারাপ।বাবা মায়ের এত দিনের দেয়া কথা আমি ভাঙতে পেরেছি।
আর ও এই অল্প ক দিনের সম্পর্ক ভাঙতে পারবেনা।

পরের দিন কলেজে গিয়ে দেখি যুথী আর এলিয়েন টা এক সাথে বসে আছে।
আর কি হাসাহাসিই না করছে।

খুব জমেছে বোধয় ওদের প্রেম।
আর যুথীও খুব খুশি,
দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আর খুশি হবেই বা না কেন।
এত সুন্দর লাভার থাকলে কে না খুশি থাকবে।

এলিয়েন টাকে যে কখনো এত সুন্দর দেখাবে কল্পনাও করিনি কখনো।
এত সুন্দর করে হাসতেও পারে ছেলেটা,না দেখলে বুঝতামই না।

আমি চেয়ে আছি ওদের দিকে।
হঠাৎ হৃদের চোখ পড়ে যায় আমার চোখে।

আমি দেখেই না দেখার ভান করে চলে আসছিলাম।
আর তখনই হৃদ আমাকে ডাকে,

আমি দাঁড়িয়ে যাই।

-কেমন আছো?
-জ্বী ভালো।আপনারা?

-হ্যাঁ ভালো আছি।

-আমরা খুব ভালো আছিরে,
-আরো ভালো থাক দোয়া করি।

-আন্টি কেমন আছে আরফা?আর আংকেল?

-জ্বী ভালো আছে।
-সবাইকে নিয়ে এসো আমাদের বাসায়।
-হ্যাঁ আসবো।

-আমাকে যেতে বলবেনা বুঝি?
-উঁহু।তোমাকে বলবোনা,
একবারে তুলে নিয়ে যাবো।

-ধুর দুষ্টু।লজ্জা লাগেনা বুঝি।

-যুথী,তুই এত লজ্জাবতী কবে থেকে হলি?
আগে তো কখনো এমন লজ্জা পেতে দেখিনি।

-ওসব তুই বুঝবিনা,
প্রেমে পড়লে মেয়েরা লজ্জাবতী হয়ে যায়।বিশেষ করে প্রেমিকের সামনে।
আগে প্রেমে পড়,তারপর বুঝবি।

-প্রেম,ওমন ছেলে আর কই।

-এখনো তোমার স্বপ্ন পুরুষ তুমি পাওনি আরফা?
চিন্তা করোনা খুব শীঘ্র পেয়ে যাবে দেখে নিও।

-হুম দেখি।

আচ্ছা আমি আসি,থাকুন আপনারা।

-আচ্ছা যাও।

কিছু দিন পরই হৃদের জন্মদিন।

আন্টি ফোন দিয়ে আম্মুকে বললেন হৃদ নাকি এবারের জন্মদিন টা ধুমধাম করে পালন করতে চায়।

তাই তারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন।
আর আমরা যেন জন্মদিনের দিন সকাল সকালই ওই বাসায় গিয়ে পৌছাই।

আম্মু আমাকে আর আব্বুকে জানালো।
আব্বু বললেন,
যেই ছেলে এইভাবে আমাদের মেয়েকে বিয়ে করার জন্য না করে দিলো তার জন্মদিনে আমাদের যাওয়া কি উচিৎ?

আমি উত্তর দিলাম,
কেন উচিৎ না বাবা?

-তারাতো আমাদের আত্মীয়।
আর পরে যেই সম্পর্ক টা হবার কথা ছিলো সেই সম্পর্কের আগে থেকেই যেহেতু আমাদের মাঝে একটা সম্পর্ক আছে,সেহেতু আমাদের সেই সম্পর্কের খাতিরে অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিৎ।

আম্মু হাফ ছেড়ে উত্তর দিলো,
আরফা ঠিকই বলেছে।

-তাহলে আর আমি কি বলবো,
মা মেয়ে যখন যাবে,আমারতো তাহলে যেতেই হবে।
ঠিকাছে যাওয়া যাবে তাহলে।

কয়েক দিন পর.

আজ রাত ১২ টার পরই এলিয়েনটার জন্মদিন।
আমি যে ওকে উইশ টা করবো তারও কোন উপায় নেই।
নাম্বার টাও রেখেছে ব্লক করে।

রাত ১১.৪৫ এ আম্মুর মোবাইল টা আমার কাছে নিয়ে আসলাম।
আর আম্মুকে বললাম আমার একটু দরকার আছে তোমার মোবাইল টা।আমার মোবাইলে ব্যালেন্স নেই।

আর একটু পরেই এলিয়েন টার বার্থডে,
ঘড়ির কাটা যখন ১২ টা ১ ঠিক তখনই আমি আম্মুর মোবাইল থেকে হৃদকে ফোন দেই,আর ও রিসিভ করতেই সুরে সুরে বলি,

হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,
হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার হৃদ,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।

-থ্যাংক ইউ সো মাচ।
তবে আমি কিছু টা শকড,
কে বলছো তুমি?

-কেন?

-নাম্বার আর ভয়েজের তো কোন মিল খুঁজে পাচ্ছিনা।
নাম্বার বলে এটা আমার আন্টির নাম্বার।
আর ভয়েজ বলে,উইশ টা আমাকে জরিনা করছে।

কিছুই তো বুঝতে পারছিনা আমি।
জরিনা কিভাবে আন্টির নাম্বার থেকে আমাকে ফোন দিবে।

-সরি।
-সরি কেন?
-আমি আরফা,
আর জরিনা নামে কেউ নেই।
আমিই এত দিন জরিনা সেজে আপনার সাথে কথা বলেছি।
আসলে আপনার ফোন টা রং নাম্বারে যায়নি সেদিন।রাইট নাম্বারেই গিয়েছিলো।
আমি আপনার সাথে ফান করেছি।

-তাই বলে ভয়েজ ভাষা এত চেঞ্জ?

-হ্যাঁ টেনে টেনে কথা বলেছি অশুদ্ধ ভাষায় আমিই।
আর এত কষ্ট করে ভাষা শুদ্ধ করেছেন আপনি,আমারি।
আর আপনার ব্লক লিস্টের নাম্বার টাও আমারি।

-বাহ্ কি সুন্দর গেইম।
-সরি।ক্ষমা করবেন আমাকে।আমি ক্ষমা চাচ্ছি প্লিজ।

-আজ একটা শুভ দিন বলে তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।
অন্য কোন দিন হলে হয়তো করতাম না।

-সরি বলেছিতো।
-ইটস ওকে।

-হুম।
আচ্ছা বলুন তো,প্রথম উইশ টা আমিই করেছি না?

-না,
-তাহলে?
-যুথী করেছে।
-কিভাবে?ফোনে তো আমিই কল দিলাম প্রথম।

-কিন্তু ও আমাকে মেসেজ তোমার কলের আগে দিয়েছে।
আমি মেসেজ টা দেখেই তোমার ফোন রিসিভ করি।

-ওহ ভালো।
আচ্ছা রাখছি।

-আচ্ছা রাখো,সকাল সকাল চলে এসো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।

কোন কিছুতেই শান্তি লাগছেনা আজকাল কেন যেন।
কেন যেন মনে হয় আমি কিছু একটা হারিয়ে ফেলছি দিন কে দিন।
কিন্তু কি সেটা?

তবে কি সেই জিনিষ টা জীবন্ত সেই এলিয়েন?

তবে কি আমি ওর সৌন্দর্যের জন্য ওর মায়ায় আবদ্ধ হচ্ছি?
আমি কি তাহলে সুন্দরের পূজারি?

না না,আমি তো সেদিনই কেমন একটা অদ্ভুত আঘাত অনুভব করেছিলাম,যেদিন যুথী আমাকে এসে বল্লো ও হৃদকে পছন্দ করে।
কেমন একটা খারাপ লাগা কাজ করেছিলো সেদিন ওর কথায়।
তাইতো আমি সেদিন ওকে কিছু না বলেই বাসায় চলে এসেছিলাম।

আবার যেদিন আম্মুর মুখে শুনলাম হৃদ বাসায় ওর অমতের কথা বলে বিয়েটা ভেঙেছে সেদিনো তো ওর জন্য আমার খারাপ লেগেছিলো।

আবার যেদিন দেখলাম যুথী হৃদের পেছন থেকে বেড়িয়ে এলো,সেদিনই কেমন একটা ধাক্কা এসে লেগেছিলো বুকের ভেতর।
মাথাটা ঝিম ধরে গিয়েছিলো।

আসলে যখন থেকে আমি হৃদকে হারাতে শুরু করলাম তখন থেকে একটু একটু করে ওর মূল্যটা বুঝতে শুরু করলাম।
ও কি আমার কাছে সেটা বুঝতে শুরু করলাম।

আসলে আমি যেটাকে ওর প্রতি শুধু মায়া ভেবেছিলাম,সেটা ধীরেধীরে যে ভালবাসায় পরিণত হচ্ছিলো বুঝতে পারছিলাম না।

কিন্তু এখন আমি কি করবো?
আমি যে নিজের পায়ে নিজেই কুঠার মেরেছি।

আমি কি হৃদকে সব খুলে বলবো?
মাফ চাইবো ওর কাছে?
ভিক্ষা চাইবো ওকে আমি ওরই কাছে?
আমি যে ওকে অন্যের হতে দেখতে পারছিনা।

আর তখনই যুথীর ফোন এলো আমার মোবাইলে।

-হ্যাঁ বল,এত রাতে ফোন দিয়েছিস।
-শোন না,আমি না খুব এক্সাইটেড আজ।
-কেন কি হয়েছে?
-হৃদ বলেছে আজ ওর জন্মদিনের পার্টিতে ও আমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবে।

কি হতে পারে সেই সারপ্রাইজ টা,তা আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি।
আর ও এই জন্যই বোধয় এত বড় আয়োজন করতেছে ওর বার্থডেতে।

-কি সারপ্রাইজ?
-আমার তো মনে হচ্ছে ও আজ আমাকে সবার সামনে আংটি পরাবে।
উফফ খুশিতে আমার আর ঘুমই আসবেনা আজ।

-তোর পরিবারকে না জানিয়েই?
-আমি আম্মুকে বলেছি হৃদের কথা।
আম্মু বলেছে কোন সমস্যা নেই।

আর সমস্যা থাকবেই বা কি করে বল, এত ভালো পরিবার।এত ভালো ছেলে।দেখতে এত হ্যান্ডসাম।
কেউ কি হাত ছাড়া করবে?

-হুম তাইতো।

-আচ্ছা বলতো আমি কোন শাড়ীটা পরবো?
-শাড়ী?শাড়ী কেন পরবি?

-আজব!আমার লাইফের এত বড় দিন আজ।আর আমি আমার ফেভারিট পোশাক শাড়ী পরবো না?

তুই বল না দোস্ত কোন শাড়ীটা পরবো আমি?
কোন শাড়ীটা পরলে আমাকে বেশি ভালো দেখাবে?

আর শোন,তুই এখন থেকে আমাকে আর নাম ধরে ডাকবিনা।
ভাবী বলে ডাকবি হি হি।

আমার আর সহ্য হচ্ছেনা এসব।
তাই সহ্যের সীমা টা ছাড়িয়ে যেতেই আমি আমার মোবাইল টা দেয়ালে ছুড়ে মারলাম।

আর মোবাইল টা সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।

চলবে...