এলিয়েন 

তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#পর্ব_২_৩
উফফ ইচ্ছে করছে মোবাইলটা এবার আছাড় মেরে অন্য গ্রহে পাঠিয়ে দেই।
এলিয়েন টা বার বার আমাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে।
আম্মু এবার হাসতে হাসতে চলে গেলেন।
ফোন টা রিসিভ করলাম আমি,
বার বার লাইন কেটে দেয়ার পরও ফোন দিচ্ছে বিধায় ফোনটা রিসিভই করা লাগলো।
-হ্যালো জরিনা স্কিপিং।
-স্কিপিং?
-হয় স্কিপিং।ইংলিশও বুজেন না?
-স্কিপিং না,স্পিকিং।
কিন্তু জরিনা?জরিনা কে?
-জরিনা আবার কে,আমি জরিনা কইতাছি।আপনে কেডায়?
কারে চান কোথায় ফোন দিছেন?
-না মানে আমি তো আরফাকে ফোন দিয়েছি।
এটা আরফার নাম্বার না?
-জ্বে না,এইখানে কোনো আরফা টারফা থাকেনা।
এইডা আমার নাম্বার।



-আচ্ছা সরি।রং নাম্বার।
-জ্বে রাখেন তয়।
উফফ বাঁচলাম।এবার অন্তত বাঁচা যাবে এলিয়েন টার কাছ থেকে।
রাতে আম্মু আব্বুকে বলে দিলাম,ওই এলিয়েনকে আমার পক্ষে বিয়ে করা কোন ভাবেই সম্ভব না।
তোমরা আমাকে অনার্সে ভর্তি করবে কিনা বলো?নইলে আমার দু চোখ যেখানে যায় আমি চলে যাবো।
তখন আমাকে কোন দোষ দিতে পারবেনা।
আম্মু আব্বু দুজন তখন কিছুই বললেন না।
সকালে নাস্তার টেবিলে দুজনই বললেন,
আমাকে অনার্সে ভর্তি করে দিবে।
বিয়ের ব্যাপারে আর কোন কথা বলবেন না আপাতত তারা।
আমি তো মনে মনে খুব খুশি।
বাহ্ এক রাতেই সব চেঞ্জ।
সব আমার ইচ্ছে অনুযায়ীই হচ্ছে।
কিন্তু রাতেতো তারা কিছু প্ল্যান করেছে এটাতো কনফার্ম।
করুক যা খুশি তাই।আমার কি।
কিছু দিন পর আম্মু আব্বু আমাকে অনার্সে ভর্তি করে দিলেন।
এরপর হঠাৎ একদিন আফসানা আন্টি এসে হাজির,
সে পারে তো আমাকে কোলে নিয়ে বসে।
-মারে,খুব ভালো করে মন দিয়ে পড়াশোনা করবি।
তুইতো আমাদের গর্ব।
তুই ভালো রেজাল্ট করলে আমরা সবাই খুশি।
ভালো ভাবে অনার্স শেষ কর।
আমাদের দোয়া সব সময় তোর সাথে আছে।
কিছু ক্ষণ পর আমি সরে যেতেই আম্মু আর আন্টি কি যেন ফুসুরফাসুর করছে।
করুক যা খুশি তা।
আমি শুধু কলেজে গিয়ে নেই,ওখান থেকেই কাউকে পছন্দ করে দিবো গলায় মালা পরিয়ে।
কাহিনী খতম।
এর মাঝে প্রায়ই হৃদ আমাকে ফোন দেয়,আর আমি ওর সাথে জরিনা সেজেই কথা বলি।আর তারপর সে রেখে দেয়।
বেচারা আবার ফোন দিয়েছে,
আমি রিসিভ করে আবার জরিনা সেজে কথা বললাম,
এবার ওপাশ থেকে হৃদ আমাকে বল্লো,
-জরিনা,তুমি কি আমার বন্ধু হবে?
আমি তো এবার শকড।
কি বলে এই ছেলে।
চুপ করে আছো কেন জরিনা?
মানলাম রং নাম্বারেই আমাদের পরিচয়।
কিন্তু পরিচয় তো হলো,যেভাবেই হোক।
আর তুমি ছাড়া আর কোন মেয়ের সাথে আজ পর্যন্ত আমি ফোনে কথা বলিনি।
তুমিই প্রথম।
তাই বলছিলাম,তুমি যদি আমার বন্ধু হতে।
আমার কোন মেয়ে বন্ধুও নেই।
তুমি হলে তুমিই হবে আমার প্রথম মেয়ে বন্ধু।



-আমার লগে আপনে বন্ধুত্ব করবেন?
আমার সম্পর্কে আপনে জানেন কিছু?
-না জানি তাতে কি,
তুমি না হয় বলবে সব।
উফফ কি যন্ত্রণায় পড়লাম রে বাবা।
তবুও তো জরিনা সাজার কারণে আরফা বেঁচে গেলো।
মনে মনে বুদ্ধি আটলাম।
করেই ফেলি বন্ধুত্ব।
পরে এলিয়েন টাকে ব্ল্যাকমেইল করা যাবে।
আর আম্মু আব্বুকে বলে বিয়ের ভূত টাও তাড়ানো যাবে।
-আইচ্ছা,আইজ থাইকা আমরা বন্ধু।
তয় আমারে আপনে যেকুনো টাইমে ফোন দিতে পারবেন না।
আমি যেহেতু মাইনষের বাড়ী কাম করি,আমার কাম যহন শেষ হইবো আমি আপনারে মিসকল মারুম আর আপনে ফোন দিবেন।
মাগার এস এম এস করা পারবেন যেকোনো টাইমেই।
কিন্তু আমি বুঝলাম না,আপনার মত একজন শিক্ষিত মানুষ আমার মত একটা কামের ছেমড়ির সাথে কেন বন্ধুত্ব করলেন।
-তুমি একজন মানুষ এটাই তোমার বড় পরিচয়।
আর সেই জন্যই আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করলাম।
-আইচ্ছা অহন রাখি।
আপায় ডাকে মোরে।
-আচ্ছা ভালো থেকো।
আজ খুব হাসি পাচ্ছে,এলিয়েনটা এত বোকা ভাবা ই যায়না।
আজ কলেজে আমার প্রথম ক্লাস,আম্মু আব্বুর কাছ থেকে দোয়া নিয়ে গিয়ে পা রাখলাম কলেজে।
খুশি মনে গেলাম কলেজের ভেতর।
কিন্তু কলেজে ঢুকতেই হঠাৎ আমার হাসি ভরা মুখটা কালো মেঘে ঢেকে গেলো।
কলেজে ঢুকতেই হঠাৎ আমার হাসি ভরা মুখটা কালো মেঘে ঢেকে গেলো।
কারণ সামনেই দেখি হৃদ দাঁড়িয়ে।হৃদকে দেখেতো আমি পুরো অবাক।
হৃদ কি করে এখানে?
আমনে যেতেই হৃদ আমাকে দেখে,আর ডেকে বলে,
-আরফা,তুমি এখানে?
-হ্যাঁ,আমি এই কলেজে ভর্তি হয়েছি।
আপনি এখানে কেন?
-আমিতো এখানেই পড়ি।
আর কয়েক মাস পরই আমার মাস্টার্স শেষ হয়ে যাবে।
মনে মনে তো খুব বকা দিচ্ছি আম্মুকে।
উফফ,যেই কলেজে এই এলিয়েন পড়ে সেই কলেজেই আমাকে ভর্তি করতে হলো।
আগে জানলে কোন দিনও ভর্তি হতাম না এখানে।
-আরফা,
-জ্বী,
-ভালোই হলো বলো,এখন মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হবে।
-জ্বী।
-এসো আমি তোমার ক্লাস দেখিয়ে দেই।
-চলুন।
হৃদ আমাকে ঘুরে ঘুরে পুরো কলেজ দেখালো।
ক্লাস টাইম হলেই আমি হৃদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ক্লাসে চলে যাই।
ক্লাসে গিয়েই অনেক গুলো ফ্রেন্ড হয় আমার।
আর পুরাতন কিছু ফ্রেন্ডদের সাথেও দেখা হয়।
ক্লাসের প্রথম দিন খুব ভালো ভাবেই কাটে।
ক্লাস শেষ করে কলেজ থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলাম আর তখনই পেছন থেকে আমাকে হৃদ ডাকে।
-আরফা,
-জ্বী,বাসায় চলে যাচ্ছো?
-না ঘুরতে যাচ্ছি।
-আচ্ছা বেশি দেরি করোনা,তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যেও নইলে আন্টি চিন্তা করবেন।
উফফ ছেলেটা ফানও বুঝেনা।
ঘুরতে যাচ্ছি বলেছি আর তাই বিশ্বাস করে নিয়েছে।
-শুনুন,আমি বাসায়ই যাচ্ছি।ঘুরতে যাবো ওটা এমনিতেই বলেছি।
-ওহ আচ্ছা,যাও তাহলে।
সাবধানে যেও।
সবাইকে আমার সালাম জানিও।
-আচ্ছা ঠিক আছে।এবার আসি?
-হুম এসো।
বাসায় আসলাম,এসে গোসল করে বসেছি আর হৃদের মেসেজ।
-জরিনা,সারাদিন কি কি করলে আজ?
আমি সারাদিন আজ কলেজে ছিলাম।
তুমি তো সারাদিনে একবার মেসেজ বা কলও দিলেনা।
খুব বিজি বুঝি তুমি?
-মেসেজ টা পড়ে উত্তর দিলাম,
জ্বে আমি আইজ খুব বিজি।মেলা কাম করছি।তাই মেসেজ দিতে পারিনি ফেরেন্ড।
-কোন ব্যাপারা না।খেয়েছো তুমি?
-জ্বে না,মাত্র কাজ শেষ হইলো।
আর গোসল কইরা বসলাম।
-আচ্ছা খেয়ে নাও তুমি। তারপর কথা বলছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।আপনেও খাইয়া নেন।
হৃদ কে যেভাবেই হোক আরফা থেকে দূরে সরিয়ে জরিনাতে মগ্ন করতে হবে।
তারপরই তো হবে আসল খেলা।
খাওয়া দাওয়া করলাম,
আম্মু জিজ্ঞেস করলো,কেমন ছিলো আজকের দিন।
কিভাবে কাটালাম।
-তোমাকে তোমাদের হৃদ সালাম জানিয়েছে।
-ওহ,হৃদের সাথে দেখা হয়েছিলো?
-হ্যাঁ।
-কি কি বল্লো রে?
-কি বলবে,কিছু বলেনি।
-ও আচ্ছা।
-হুম।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে মোবাইল টা হাতে নিয়ে দিলাম হৃদকে একটা মেসেজ।
-হিলু ফেরেন্ড কি করেন?
-এইতো লাঞ্চ করলাম।তুমি লাঞ্চ করেছো?
-হয়।
-আজ তোমাকে আমি ভাষা শেখাবো,
-কি শিখাইবেন?
-ভাষা শেখাবো,শুদ্ধ ভাষা।
-আপনে কি আমার চিটার নাকি?
-কিহ?
কি বললে তুমি আমাকে?
-ওই যে ইংলিশে সার রে য কয়।
-আরে ওটা চিটার না,ওটা হচ্ছে টিচার।অর্থাৎ শিক্ষক।
-ওহ আইচ্ছা।
-আইচ্ছা না বলো আচ্ছা।
-ওহ আচ্ছা।
-হুম ঠিক তাই।
আমি তোমাকে এইভাবে ছোট ছোট কথা গুলো শেখাবো।তারপর তোমাকে পড়ানোও শেখাবো।
-হি হি হি আইচ্ছা,না না থুক্কু থুক্কু আচ্ছা।
-গুড গার্ল। এইতো হয়েছে।
-আইচ্ছা আপনার কুনো গালফেরেন্ড নাই?
-না নেই।
-কি বলেন?এই যুগে কারো গাল ফেরেন্ড না থাকে?
-আসলে আমার বাবা মা আমার জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করে রেখেছেন।
-তাইলে তো ভালাই।হেরেই বিয়া করবেন বুঝি?
-হুম যদি ও রাজী হয়।
জানো,ওর নাম্বারে ফোন করতে গিয়েই আমি রং নাম্বারে তোমাকে পাই।
-ওহ।
আচ্ছা হেই কি আপনারে পছন্দ করে?
মানে কবে বিয়া আপনাগো?
আসলে কবে বিয়ে সেটাতো বলতে পারবোনা।আর ও হয়তো আমাকে তেমন পছন্দ করেনা।
-তাইলে এখন কি হইবো?
-যা হবার তাই হবে।ও রাজি না হলে ওকে আমি জোর করে বিয়ে করবোনা।
জোরের বিয়ে তে সুখী হওয়া যায়না।
-হুম।
আচ্ছা এখন বিদায়।
পরে কথা হবে আবার।
-আচ্ছা ঠিক আছে.
এদিকে জরিনা সেজে আমি হৃদের সাথে বন্ধুত্ব চালিয়ে যাচ্ছি।
কথা বলছি, মেসেজ দিচ্ছি।
আর ওদিকে হৃদের সাথে আমার কলেজেও দেখা হচ্ছে।
আমার বান্ধবী কয়েক জন তো হৃদের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে।
আমি ওদের বলেছি হৃদ আমার খালাতো ভাই।
-তোরা কি দেখে আমার ওই এলিয়েন ভাইয়ের উপর ক্রাশ খাস তা আমার মাথায় আসেনা।
-মনের চোখ দিয়ে দেখতে হয় বুঝলি?
ছেলেটা যে খুব সোজা শান্ত দেখলেই বোঝা যায়।
ওর বিয়ের পর ওর বউ এর সব কথা শুনবে।
ওকে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে চালানো যাবে।
আচ্ছা দোস্ত,তোর এত কিছু জানার দরকার নাই।
তুই শুধু আমার কথা টা একটু তোর ভাইকে বলে দে।
দেখবি আমি ওকে কতটা চেঞ্জ করে ফেলি।
আমি ওদের কথা উড়িয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসি।
এদিকে দেখি হৃদের মেসেজ।
আস্তে আস্তে হৃদ জরিনাকে কথা বলা শেখায়,ওকে পড়াশোনা শেখাচ্ছে টুকিটাকি।
সবই বন্ধুত্বের খাতিরে।
একদিন আমি হৃদকে জরিনা সেজে বললাম,
আমাকে কি আপনার দেখতে ইচ্ছে করেনা?
ও উত্তর দিলো,করে।
কিন্তু তুমি যদি দেখা না করো তাই বলিনা।
-আচ্ছা আপনার হবু বউ যদি জানে আপনি অন্য এক মেয়ের সাথে কথা বলেন,
সে রাগ করবেনা?
-যদি আমাকে বুঝে,আমাদের বন্ধুত্বকে বুঝে তাহলে রাগ করবেনা।
-আচ্ছা আপনি কি সারাজীবন আমার বন্ধু হয়ে থাকবেন?
-হুম ইচ্ছেতো আছে তাই।
ধীরেধীরে আমাদের বন্ধুত্ব গভীর হচ্ছে।
আমরা আপনি থেকে তুমি করে বলি,
যদিও হৃদের কাছে এটা বন্ধুত্ব।
কিন্তু আমার কাছে এটা শুধু মাত্র একটা গেইম।
আজ কলেজে এসে কোথাও হৃদ কে দেখিনি।
দু চোখ আমার বার বার পর্যবেক্ষণ করে যখন ক্লাসের দিকে পা বাড়ালাম।
ঠিক তখনই যুথী হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আমাকে বল্লো...
চলবে...