এলিয়েন👽
তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু✍️
#পর্ব_৬_৭_ও_শেষ_পর্ব😊😊

আমার আর সহ্য হচ্ছেনা এসব😡😡
তাই সহ্যের সীমা টা ছাড়িয়ে যেতেই আমি আমার মোবাইল টা দেয়ালে ছুড়ে মারলাম📱💥
আর মোবাইল টা সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো💔.

কিছুতেই আজ দু চোখ বুজতে পারছিনা আমি👀
ঘুমহীন চোখ😩
সারা রাত ঘুমহীন কাটিয়ে দিলাম🌙

সকালে আম্মু ডেকে বললেন👩‍👧:



-আরফা, উঠেছিস? কখন যাবি তোর আন্টির বাসায়?🕒

-যেতে ইচ্ছে করছেনা মা, তোমরাই বরং চলে যাও🚫.

-কি বলিস? রাতেই না বললি যাওয়া উচিৎ আমাদের। আর এখন বলছিস যেতে ইচ্ছে করছেনা😕.
তুই না গেলে আমরাও যাবোনা🚶‍♀️.

-আচ্ছা আচ্ছা যাবো🙄.

-কখন যাবি? সকালে গেলেই তো ভালো হয়। সারাদিন একটু বোনের বাসায় থাকা যাবে🏠, গল্প করা যাবে📖.

বিকেল থেকেই তো আবার বাড়ী ভর্তি মানুষের সমাগম হবে👨‍👩‍👧‍👦.
গেলে সকালেই চল🚗.

-আচ্ছা,
-তাহলে আমি নাস্তা বানিয়ে নেই🍳🥪। খেয়ে দেয়ে রেডী হ তাহলে👚👖.

-ঠিক আছে👌.

আম্মুর নাস্তা বানানো হলে আমরা সবাই নাস্তা করে আন্টিদের বাসায় যাই🏠.

আন্টিদের বাসায় পা রাখতেই কেমন যেন লাগছিলো🤔.
আগে তো কখনো এমন হয়নি.

আন্টি আমাদের দেখে খুশিতে অনেকটা দৌড়ে আসেন🏃‍♀️, আর এসেই আমাকে আর আম্মুকে জড়িয়ে ধরেন🤗.

আমাদের নিয়ে বসতে দেন🪑.

-তোরা সকাল সকাল এসেছিস আমি কত খুশি হয়েছি🎉.
বস, আমি নাস্তা নিয়ে আসি তোদের জন্য🍽️.

-আমরা খাওয়া দাওয়া করেই এসেছি🍴. তুই এত তাড়াহুড়ো করিস না তো😅.
বস, আমাদের সাথে🪑.


-কি ভাইজান, ভালো আছেন তো?🙂
-আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাই। আপনি কেমন আছেন?🙏
-জ্বী ভালো🙂.

-আসেন তো না এখন বাসায়🏠,
-আর ভাই ব্যস্ততায় সময় পাড় করছি⏰.

আর যাবোই বা কোন মুখ নিয়ে ভাই😔,
ছেলেটা আমার যা করলো😞,
এরপর আর কিভাবে...

-কি যে বলেন না ভাই🙄.
এসব আমরা কবেই ভুলে গেছি💭.
এসব মনে করে সংকোচ বোধ করবেন না একদম❌.

আব্বু আর আংকেলের কথা শুনে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে😔.
কতই না কষ্ট পেয়েছেন তারা💔.
আবার হৃদকেও সবাই ভুল বুঝেছে🤦‍♀️.
অথচ দোষি তো আমি😓.
হৃদ নয়💔.

এদিক ওদিক তাকাচ্ছি আমি👀,
কোথাও হৃদকে খুঁজে পাচ্ছিনা😟.

কিন্তু কাউকে জিজ্ঞেস করারও সাহস পাচ্ছিনা যে হৃদ কই🤐.

আন্টি আমাদের সবাইকে নাস্তা খেতে দিলেন🍽️.
আমরা হালকা নাস্তা করলাম🥪.
তারপর আন্টি আমাকে নিয়ে তার রুমে গেলেন🚶‍♀️.

-আয় তোকে কিছু দেখাই আজ📸. না দেখালে হয়তো কোন দিন শান্তি পাবোনা আমি🤔.
-কি দেখাবেন আন্টি?❓

-তুই বস এখানে🪑.

আন্টি আমার ঘাড় ধরে আমাকে খাটে বসিয়ে দিলেন🛏️.
আমি বসলাম, আর আন্টি তার আলমারি খুললেন🗄️.

আমি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার আর হৃদদের পরিবারের সবার এটাচ ছবি📸.

-আন্টি, এই ছবি গুলোতো আগে দেখিনি🤨.


যেদিন তোর ইন্টারের রেজাল্ট দেয়, সেদিন এসে লাগিয়েছিলাম📅.
তুইতো এর পর আর আসিস নি❌. তাই দেখিসনি👀.

-ওহ🙄.

আন্টি আলমারি খুলে অনেক গুলো শাড়ী বের করলেন👗,
আর অবাক করা বিষয় হচ্ছে,
যেই শাড়ীই বের করছে, সব শাড়ীরই ডাবল পার্ট আছে🪶.
মানে এক রকমেরই দুইটা করে শাড়ী💫.
সেটা হোক পুরাতন ডিজাইনের কিংবা নতুন ডিজাইনের✨.

আন্টি শাড়ী গুলো বের করে বললেন, এগুলো সব আমি কিনেছি। নিজ হাতে কিনেছি🛍️.

জানিস এখানে একই রকমের দুটো করে শাড়ী কেন? 🤔

  • কেন আন্টি?❓

  • কারণ সব শাড়ী আমি আমার আর তোর জন্য মিল করে কিনেছি💖.
    একটা তোর আর একটা আমার🫱.

ভেবেছি তোকে যেদিন হৃদের বউ করে ঘরে তুলবো, সেদিন তোকে সব গুলো শাড়ী দিবো🎁.
আর আমরা দুজন মিলে এল সাথে এক রকমের শাড়ী পরবো👯‍♀️.

কিন্তু দেখ, কি ভাগ্য আমার😞.
ছেলেটা আমার সব স্বপ্ন মাটির সাথে মিশিয়ে দিলো💔.

আমার এবার কলিজাটা যেন ছিড়ে যাচ্ছে💔.
একজন মায়ের মনে এতটা কষ্ট দিলাম আমি?😢

-আচ্ছা শোন, এই শাড়ী গুলো আমি না তোর বিয়েতে উপহার দিবো🎁.
নিবি না? বল না নিবি?
-আন্টি এগুলোর উপর হৃদের বউ এর হক আছে শুধু💍.
আমার না💔.
আপনি তাকেই দিয়েন শাড়ী গুলো👗.

কথাটা কতটা কষ্টে যে বলেছি আমি তা শুধু আমিই জানি😔.

আন্টি এবার কিছু গহনা বের করে দেখালেন💎,
দেখ, এই গুলোও আমি তোর জন্য গড়ে রেখেছিলাম👑.

আন্টি আমাকে সব দেখাতে দেখাতে 

এক সময় আমার হাতে দুইটা চুড়ি পরিয়ে দিয়ে বললেন,
তুই তো কিছুই নিবিনা এসবের❌.
কিন্তু আমি চাই এই চুড়ি দুটো তুই নে💍.

  • প্লিজ আন্টি, এত দামী জিনিষ আমি নিতে পারবোনা🙏.

  • একটা থাপ্পড় লাগাবো🖐.
    এই দুইটা আমি তোকে হৃদের মা হিসেবে না,
    তোর মা হিসেবে দিলাম👩‍👧.
    এই চুড়ি এখন খুললে তোর খবর আছে👀.

আমি আন্টিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম😭.

আন্টিও কাঁদছে😢.


  • কাঁদিস না মা.
    কাঁদিস না😭.
    তুই খুব সুখী হবি, আমি দোয়া করি🙏.

আমি মনে মনে বলি,
আমার সুখ যে তোমার বাড়ীতে আন্টি।
যা আমি এত দিনে বুঝেছি💖.

কিছু ক্ষণ পর আম্মু আসেন আন্টির রুমে,
কি রে, কি করছিস তোরা?

আন্টি সব কিছু আলমারিতে রাখতে রাখতে বললেন,

  • এইতো, আরফাকে জিজ্ঞেস করছিলাম কোন শাড়ীটা পরবো.

আসলে আন্টি চাচ্ছিলেন না আম্মুকে এসব দেখাতে😞.
কারণ আম্মু খুব কষ্ট পাবে এগুলো দেখে😔.
সেই জন্য।

আমার হাতে স্বর্ণের চুড়ি দেখে আম্মু জিজ্ঞেস করেন,

  • কিরে আন্টির চুড়ি পরেছিস?
    তোর গুলো পরতে বললাম তখন দেখি পরলিনা👀.

  • আন্টির না,
    ওরই এগুলো💍.
    আমি ওকে দিয়েছি❣️.

  • এত দামী জিনিষ ওকে দিলি তুই?

  • কেন? আমার মেয়েটা কি কম দামী নাকি?

আম্মু আন্টিকে জড়িয়ে ধরলেন🤗.

তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই আম্মু জিজ্ঞেস করলেন,
হৃদ কই রে?
হৃদকে যে দেখছিনা🤔.

  • আর বলিস না, ও আজ কাল কি করে না করে কোন খবরই পাইনা📱.
    ছেলে আমার বড় হয়ে গেছে এ কয় দিনে👦.

  • মানে?

  • এখন আর সাদাসিধে হৃদ নেই আমার.
    এখন কেমন হয়েছে দেখলেই বুঝবি😔.

দুপুর হয়ে গেলো, হৃদের কোন খবর নেই⏳.
হয়তো যুথীকে নিয়ে ঘুরছে💑.

বসে আছি আমি হৃদের রুমে,
কি সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে রুমটা হৃদ🛏️.
আন্টি একবার বলেছিলেন, হৃদের রুম হৃদ যে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে🧹.
একদম গোছালো আমার ছেলেটা.

হঠাৎ চোখ গেলো ওর ডায়েরীর দিকে📖.
হাতে নিয়েও খুলার সাহস পাচ্ছিনা😟.

কারো অনুমতি ছাড়া তার ডায়রী পড়া নাকি উচিৎ না❌.

কি করবো, কি করবো ভাবতে ভাবতে খুলেই ফেললাম ডায়রীটা📖.

ডায়রীর শুরু থেকে, সব ওর জীবনে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী👀.
এক এক করে পড়তে লাগলাম আমি📚.

শেষমেস আমাকে নিয়ে লিখা ঘটনায় চোখ পড়লো আমার👁️.

**"আরফা, আমার কাজিন হয়। মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দর। ওর মুখের দিকে তাকালে যে কেউ ওর মায়ায় আবদ্ধ হতে বাধ্য হবে"**💖
"ভাগ্যগুণে বাবা মা আমার এই মেয়েটার সাথেই নাকি বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন".
"যদিও মা বাবা বলার আগে আমি কখনো ওকে সেই নজরে দেখিনি। কিন্তু যেদিন জানলাম, সেদিন থেকে ওর জন্য অন্য রকম এক অনুভূতি কাজ করতে শুরু করলো".

**"ওর জন্য হৃদয়ের অন্তস্থঃতল থেকে ভালবাসার ফুল ফুটতে লাগলো"**🌸.
"আমি সাদাটে এক মানব। তেমন গুছিয়ে লিখতে পারিনা। কবি বা লেখক হলে হয়তো আরো সুন্দর করে লিখতে পারতাম".

"জীবনের প্রথম ভালো লাগা আমার আরফা। এখন ভালবাসাও বলা যায়। ওকে আমি ধীরেধীরে ভালবেসে ফেলেছি"❤️.
"আমার খুব ইচ্ছে আমরা দুজন মিলে নদীর ধারে ঘুরতে যাবো".

**"এ কথা শুনলে হয়তো আরফা আমাকে পাগল বলবে, মানুষ তার ভালবাসার মানুষটাকে নিয়ে নামী দামি জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। আর আমি কিনা এই নদীর ধারে যাবার স্বপ্ন দেখি"**🏞️.

"আরফা সেদিন ধবধবে সাদা একটা শাড়ী পরবে। আর সাথে থাকবে কালো রঙের ব্লাউজ। যা আমি ওকে কিনে দিবো".
"আর আমিও পরবো সাদা রঙের পাঞ্জাবী। কালো জিন্স প্যান্ট".

"আরফা হয়তো বলবে, মানুষ লাল নীল হলুদ রঙ পরে ঘুরতে বের হয়। আর আমরা কিনা সাদা কালো পরবো। এ কেমন পছন্দ তোমার".

**"আর আমি তখন বলবো, আমি যে সবার থেকে আলাদা রে বউ"**💬.

এইটুকু পড়ার পর আমি লক্ষ্য করলাম আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে ডায়রীর পাতায় পড়লো😭.
দম নিতেও যেন আজ কষ্ট হচ্ছে আমার💔.

আমি জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে বলছি,

"আমি এসব কিছুই বলতাম না রে হৃদ। কারণ আমি জানি তুমি সবার থেকে আলাদা। আর তোমার পছন্দও সবার থেকে আলাদা".
**"তুমি যে আমার এলিয়েন"**👽.

আর তখনই হুট করে এসে কে যেন আমার হাত থেকে ডায়েরীটা নিয়ে নিলো🤚.

আমি তাকিয়ে দেখি হৃদ.

  • "কি করছো তুমি এটা?"
    **"তুমি জানোনা, কারো অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত ডায়েরী পড়া উচিৎ না"**😠.

  • "প্লিজ আমাকে শেষ করতে দিন"
    "আমি পড়বো ডায়েরীটা".


-না,
আমি চাইনা যুথীকে নিয়ে লিখা ফিলিংস গুলো কেউ পড়ে নিক।

-কথা দিলাম আমি শেষের দিকের কিছুই পড়বোনা।
শুধু আমার টপিক টুকু পড়েই আমি রেখে দিবো।

-সরি।আমার ব্যক্তিগত ডায়েরী আমি ছাড়া শুধু মাত্র যুথীর পড়ার অধিকার আছে।
আর কারো নয়।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি পড়বোনা আপনার ডায়েরী।কিন্তু আজ আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই।
আজ না বলতে পারলে হয়তো আর কোন দিনও বলতে পারবোনা।

প্লিজ একটু শুনবেন?
-কি বলবে বলো?

-আমি ভণিতা করে কথা বলতে পারিনা,না পারি কাব্যিক ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে।
কিন্তু এসব না পারলেও আমি সোজাসুজি ভাবে কথা বলতে পারি,
তাই সোজাসুজি ভাবেই আপনাকে কথা টা বলছি,

হৃদ,আমি আপনাকে..

হৃদ এই হৃদ কোথায় তুমি?
উফফ এসেই নিজের রুমে ঢুকে গেছো?আমাকে বাইরে একা বসিয়ে রেখে।

কথা টা সম্পূর্ণ হবার আগেই যুথী চলে আসে।

আমি যুথীর দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর আচমকা একটা ঝড় বয়ে গেলো।
যুথীর পরনে ধবধবে সাদা রঙের একটা শাড়ী,আর কালো রঙের একটা ব্লাউজ।

আমি দেখে তাকিয়ে রইলাম।

আর যুথী আমাকে দেখে হেসে দিয়ে বল্লো,
আমার ননদ টা তাহলে আমার আগেই এসে গেছে?

#৭ম_এবং_শেষ।

আর যুথী আমাকে দেখে হেসে দিয়ে বল্লো,
আমার ননদ টা তাহলে আমার আগেই এসে গেছে?

আমি কিছু বলার মত ভাষা হারিয়ে ফেললাম।

-হৃদ তাড়াতাড়ি সাদা পাঞ্জাবী টা পরে নাও তো।
-এক্ষুণি পরে আসছি,তুমি যাও গিয়ে বসো।

আরফা তুমিও যাও।

আমি মাথা নিচু করে চলে আসলাম।

কিছু ক্ষণ পর হৃদ একটা পাঞ্জাবী পরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।

আমার নজর আটকে গেলো ওর দিকে চেয়ে।

-কিরে কি দেখছিস?

-না কিছুনা।
-রাতে লাইন কেটে যাবার পর কত বার তোর নাম্বার ট্রাই করলাম।
আর গেলোই না।

-ওহ।
-শোন না,আজ না আমি খুব এক্সাইটেড।
এত্ত খুশি লাগছে আমার।

বিকেল হয়ে গেছে।

-কিরে হৃদ,তোর গেস্ট রা এখনো আসছেনা যে?

-এই তো আন্টি এসে গেছি আমরা।

হৃদের বন্ধুরা এসে গেছে।

এসে সবাই হৃদের সাথে আর যুথীর সাথে কথা বলছে।

আর কোন গেস্ট নেই আর বাসায়।
শুধু হৃদের বন্ধুরা,যুথী আমার পরিবার আর হৃদের পরিবার।

ওহ,তাহলে এ কয়জন নিয়েই ও অনুষ্ঠানের প্ল্যানিং করেছে।

অযথা ও আমাদের ইনভাইট করতে বলেছে।

এখন যদি সবার সামনে এলিয়েন টা যুথীকে আংটি পরায়,
তখন আম্মু আব্বু কতই না আঘাত পাবে।

এই দুজন মানুষকে আসতে না বল্লেও পারতো।

হৃদের বন্ধুরা যুথীর সাথে আড্ডা জমিয়ে দিয়েছে।
দিবেই তো,বন্ধুর বউ বলে কথা।

সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করলাম।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে,
একটু পরই কেক কাটবে হৃদ।
আর সবার সামনে হয়তো বলবে ও যুথীকে ভালবাসে আর ওকে বিয়ে করতে চায়।

উফফ এসব ভাবতে পারছিনা আমি।
অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি আমি এগুলো ভাবতেই।

একা এসে দাঁড়িয়ে আছি হৃদের রুমের ব্যালকোনিতে।

হৃদ যেন কেন রুমে এসেছে,

-আরফা,তুমি এখানে?

-হ্যাঁ।
-এখানে কি করো?
চলো যাই সবাই তো ওখানে অপেক্ষা করছে।

-আপনি এখানে কেন তাহলে?

-আংটি টা নিতে এসেছিলাম।

-হৃদ আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।
-উঁহু এখন কোন কথা না,চলো আগে ওখানে যাই।

-না হৃদ,আমাকে বলতে দিন প্লিজ।

আমি হাত জোর করে ওর সামনে হাত উঠাতেই ও আমার হাত ধরে বলতে লাগলো,

-এই চুড়ি তোমার হাতে?

-হ্যাঁ আন্টি দিয়েছেন আমাকে.
-কেন দিয়েছে?
এই চুড়ির উপর তো তোমার কোন অধিকার নেই।

এই চুড়ি তো আমার মা আমার হবু বউ এর জন্য রেখেছে।

-চুড়ি খোলো,
-কিহ?
-আমি বলেছি চুড়ি খোলো।
এই চুড়ি তোমার নয়,এগুলো আমি যুথীকে দিবো।

-না প্লিজ এই কথা বলবেন না,এই চুড়ি মা আমাকে দোয়া করে দিয়েছেন।
-কি বললে তুমি?
মা?আন্টি বলো আন্টি।

চুড়ি খোলো,এই চুড়ির উপর যার অধিকার আমি তাকেই সেই চুড়ি দিতে চাই।

-আমি দিবোনা এই চুড়ি।
-কেন দিবেনা?
-দিবোনা বলেছি দিবোনা।

আর আংটি কই দেখি,
এই যে এই আংটি টাইতো।
আর এই আংটাও আমার।

এবার পাঞ্জাবীর কর্লার ধরে এলিয়েন টাকে বললাম,

-আর এই যে তুই,এই তুই টাও আমার।শুধুই আমার।

এই চুড়ির উপর,এই আংটির উপর যেমন শুধু মাত্র আমার অধিকার।
তেমনি তোর উপরও শুধু আমারই অধিকার থাকবে।
আর কারোনা।ক্লিয়ার?
কথা টা ঢুকেছে মাথায়?

সেই মুহূর্তে যুথী এসে বলে,

তাহলে আর কি,
-হৃদ,সাদা শাড়ীটা কই রেখেছো?ওটাও দিয়ে দাও।
তাহলেই সব হয়ে যাবে।

আমি অবাক হলাম,
হৃদের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
মানে কি?

-আগে পাঞ্জাবী তো ছাড়ো।
-ওহ সরি।

-এগুলো বলতে এত গুলো দিন লাগলো?
কতই না কষ্ট করতে হলো আমাদের।
আর ফাইনালি তুমি,

-আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিনা।

-আচ্ছা আমি বলছি,

আসলে হৃদের সাথে আমার কোন প্রেম এর সম্পর্ক নেই।
আমরা অনলি ফ্রেন্ড।
হৃদের বন্ধু তন্ময় আমাকে প্রপোজ করেছে,আর আমি সেটা এক্সেপ্ট ও করেছি।

আর তারপর তন্ময়ের কাছ থেকেই শুনি আমি হৃদ আর তোর বিষয়ে সব কিছু।
যে,তোর সাথে হৃদের বিয়ে হবার কথা।

আর আমি এ কথা শুনে খুব রেগে যাই,
যে তুই আমার এত ভালো বন্ধু হয়েও আমাকে এ কথা টা বল্লিনা।
গোপন করলি আমার কাছে।

তাই আমি সেদিন ফান করে তোকে গিয়ে বলি হৃদকে আমার পছন্দ।
যাতে তুই জ্বলিস আর সত্যি টা আমাকে বলিস।
কিন্তু আমি সেদিন তোর কোন রিয়েক্ট না দেখে খুবই অবাক হই।

আর তারপর কিছু দিন পর তন্ময়ের কাছে শুনতে পাই তোর আর ওর বিয়েটা ভেঙে গেছে।

হৃদ পুরাই ভেঙে পড়ে তখন,শুধু কান্নাকাটি করে।
পরে ও তন্ময় আর আমার সাথে সব শেয়ার করে।

আর বলে,তোর নাকি স্মার্ট ছেলে পছন্দ।
তাই ও স্মার্ট হবে।
আর তাই ও নিজেকে তোর জন্য পরিবর্তন করে।

আবার এদিকে হঠাৎ একদিন হৃদের ফোনে কল আসে,

ও বের করতেই বলে জরিনার কল।

আমি আর তন্ময় জিজ্ঞস করি জরিনা কে?

তখন বলে, তোর মা নাকি তোর নাম্বার দিয়েছিলো ওকে।
আর ভুল করে কল নাকি রং নাম্বারে চলে যায়।আর তারপর থেকেই নাকি জরিনার সাথে ওর বন্ধুত্ব।

পরে আমি হৃদের ফোন নিয়ে নাম্বার টা দেখতে চাইলাম।

পরে দেখি,নাম্বারে কোন ভুল নেই।
ওটা তোরই নাম্বার।

আর আমি হৃদকে ১০০% শিউরিটি দিয়ে বলি,এটা তোরই নাম্বার।

তখন ও বুঝতে পারে জরিনা আসলে আর কেউ নয়।
তুই ই।তুই ই জরিনা সেজে ওর সাথে কথা বলিস।

আর তাই ও জরিনাকে মানে তোকে এভোয়েড করে,আর বলে আমাকে ও ঠকাতে চায়না।
যাতে এগুলো শুনে তোর মনের ঘুমন্ত ভালবাসাটা জাগ্রত হয়।

আর ফাইনালি আজ আমরা সাক্সেস।
আর হৃদ আজকের প্ল্যান কিন্তু তোর জন্যই করেছে।

আজ আমি হৃদ আর তন্ময় গিয়ে তোর জন্য সাদা শাড়ী কালো ব্লাউজ আর আংটি কিনি।

হৃদের বিশ্বাস ছিলো আজ তুই ওকে তোর মনের কথা বলবিই।
আর যদি আজ না বলিস তাহলে ও আর কোন দিন তোর দিকে তাকাবে না।

আর এই যে শাড়ী দেখছিস,এই শাড়ী আমাকে তন্ময় কিনে দিয়েছে।হৃদ না।
তন্ময় বল্লো দুই বান্ধবী পার্টিতে এক রকম শাড়ীই পরো।

উফফ ফাইনালি আমরা সাক্সেস।
এবার আমি ওখানে যাচ্ছি।
তোরা রেডি হয়ে আয়।কেমন?

যুথী চলে যাচ্ছিলো,
আমি যুথীকে পিছু ডেকে বলি,

-যুথী,
-হুম বল,
-থ্যাংক ইউ রে।
-হা হা হা, ওয়েলকাম মিসেস এলিয়েন।

তাড়াতাড়ি শাড়ীটা পরে আয়।

:

আমি হৃদের বুকে দুই তিন টা কিল ঘুষি দিয়ে বললাম,

-আমার সাদাসিধে এলিয়েন টাই ভালো ছিলো।
স্মার্ট হৃদ টা খুব চালাক।

হৃদ আমাকে জড়িয়ে ধরে বল্লো,
হয়েছে এবার মান অভিমানের পর্ব শেষ করো।
আর এই নাও শাড়ী,এটা পরে ওখানে চলে আসো।

তারপর আমি শাড়ীটা পরে সবার সামনে যাই।
সবাই আমাকে শাড়ীতে দেখে খুশি হয়।

হৃদ কেক কাটার আগে সবাইকে বলে,
আমি আজ সবাইকে একটা গুড নিউজ দিতে যাচ্ছি,

আর এই গুড নিউজ টা দিতেই বিশেষ করে আমার বার্থডের আয়োজন করা।

সবাই জেনে খুশি হবেন যে,খুব তাড়াতাড়ি এই যে আমার কাজিন আরফা,
ওর সাথে আমার শুভ বিবাহ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে,তাই আজ আমি সবার সামনে ওকে আংটি পরিয়ে দিতে চাই।

আর সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

সবাই খুব বেশি খুশি হয় এই কথা গুলো শুনে।
বিশেষ করে আমাদের দুই পরিবার।

তারপর আমার এলিয়েন টা আমাকে আংটি পরিয়ে দেয়।
আর আব্বু তখন তার হাত থেকে তার আংটিটা খুলে দিয়ে বলেন,
নে মা পরিয়ে দে হৃদের আঙুলে।
তারপর আমিও হৃদকে আংটি পরিয়ে দেই।

এরপর হৃদ আমার হাত ধরে কেকটা কাটে।
বাবা মা,বন্ধু বান্ধব সবাই হাসতে হাসতে হাত তালি দেয়।

এরপর একটা শুক্রবার দেখে হয়ে যায় ধুমধাম করে আমার আর আমার এলিয়েনের বিয়ে।

এখন আমাদের বিয়ের ৯ বছর চলে।
৭ বছরের আমাদের একটা ছেলে আছে।
ছেলেটা একদম বাবার মত হয়েছে।
মানে বাবা যেমন স্মার্ট হবার আগে ছিলো।

ছেলে আমার চুলের মাঝ খানে সীঁথি কাটে।
মাথায় এত্ত গুলা তেল দেয়।
এই বয়সেই সে চেক শার্ট ছাড়া কোন রকম টিশার্ট বা শার্ট পরেনা।

এক এলিয়েন নিয়েই পারিনা আমি।
আবার এলিয়েন টু এর জন্ম।

কেউ কি আমার ছেলেকে মেয়ের জামাই বানাবেন নাকি হ্যাঁ?
বানাতে চাইলে আগে ভাগেই মেয়ের বায়োডাটা জমা দিন।
পরে কিন্তু সিরিয়াল পাবেন না হুম।

(সমাপ্ত)

গল্পটা কেমন লেগেছে আশা করি অবশ্যই জানাবেন।
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
আল্লাহ্‌ হাফেজ।