কেস_নং_৯৯৯

#পর্ব_৫_৬_৭


এই থানায় জয়েন করার পর থেকেই একটা বিষয় অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তা হলো-

যে কোনো গাড়িতেই উঠার পরই গাড়ির আশেপাশে ভালোভাবে নজর বুলানো। 

আজ ও এর ব্যতিক্রম হলো না, আমি গাড়িতে উঠেই

সিটের নিচ,গাড়ির উপরে নিচে ভালোকরে দেখলাম। 

সিটের নিচে জুটে গেলো একটা স্টাম্প যার উপর লেখা-

 "নেক্সট টার্গেট ইউ"। 

এসব হুমকি ধমকি এখন আর বেশি একটা আমলে নেই না। 

দৈনন্দিন ই কোনো না কোনো ভাবে হুমকি আসছেই,

কোনো দিন মেসেজ এর মাধ্যমে, আবার কোনোদিন ফোন কলের মাধ্যমে। 

আর আজ তো একেবারে হত্যার যন্ত্রসহ দিয়ে গেছে,

 বেটা বুঝাতে চাচ্ছে, 

তুমি যাই করো না কেন বাছাধন, আমরা তোমার থেকেও দু'কদম এগিয়ে । 


আমি রফিককে বললাম-

আচ্ছা রফিক একটা জিনিস আমার মাথায় গিজগিজ করছে। 

- স্যার,, জিনিসটা কি?

আমাদের রাতে আসার ব্যাপারে তো আমরা কাউকে বলিনি ,আমি তুমি আর আসফাক ছাড়া কেউ জানেনা। 

-হ্যাঁ স্যার। বিষয়টা আমার কাছেও একটু সন্দেহজনক মনে হচ্ছে, কিন্তু এই কাজটা কে বা কারা করছে তা তো আমরা জানি না?

আচ্ছা..ইটস ওকে!

এগুলো এখন বাদ দাও, বাসায় গিয়ে হালকা রেস্ট করার পর প্রচুর কাজ করতে হবে। 

-জ্বি স্যার। 


গতরাতের না ঘুমানো শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে চোখে ভর করলো। 

ঘুমের মাঝে মাকে স্বপ্ন দেখলাম, মা আমাকে বলছে-

 "বাবা কেমন আছিস?

আজকাল তোকে নিয়ে তেমন একটা ভালো স্বপ্ন দেখিনা। 

আর তুই নতুন জায়গায় যাওয়ার পর তো আমাদেরকে   একেবারেই ভুলে গেছিস"। 

একলাফে ঘুম থেকে উঠে মাকে ফোন দিলাম,

হ্যাঁলো মা। 

কি অবস্থা তোমার?

- হ্যাঁ ভালো রে। তোর কি অবস্থা ?

   "মা" অনেক ভালো আছি। 

লক্ষ্য করলাম মুখ ফসকে অনেক কথা বারবার বের হবার চেষ্টা করছে, তাই তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দিলাম। 

মাকে তো কোনোভাবেই কিচ্ছু বলা যাবে না,

যদি বলি তাহলে  "মা" নির্ঘাত বলতে-

বাবা তোর পুলিশের চাকুরী করা লাগবে না,এক্ষণি ঘাট্টি বস্তা নিয়ে বাড়িতে চলে আয়। 


আমি আর রফিক বসে আছি বাসার ড্রয়িংরুমে, আমার হাতে সিমকার্ড আর ভাঙ্গা দাঁতের নকল অংশ। 

রফিককে মনমরা মনমরা দেখে জিজ্ঞেস করলাম-

কি হয়েছে তোমার? 

কোনো প্রবলেম নাকি?

-না স্যার, পরিবারের কথা খুব মনে পড়ছে, ছোট্ট মেয়েটার পোড়া জায়গায় নাকি ইনফেকশন হয়ে গেছে, 

আর এভাবে তো কখনো পরিবার ছাড়া থাকিনি । 

আমি বুঝতে পেরেছি বেচারার প্রবলেম কোন জায়গায়, কথা না বাড়িয়ে তাকে রেস্ট করার জন্য পাঠিয়ে দিলাম। 


মনেমনে নিজেকে শান্তনা দিলাম এই বলে-

আজ আমার বউ বাচ্চা নাই,তাই জীবনে কোনো প্যারা ও নাই। 

রিল্যাক্স মুডে জীবনযাপন করছি। 


চন্ডীপুর শহরের দিকে যাচ্ছি উদ্দেশ্য ডেন্টাল হাসপাতালে ডাক্তার হরিপদ কুমারের কাছে যাবো। 

মোটামোটি ডাক্তার হরিপদ এই শহরের সবচেয়ে প্রবীণ এবং একক দাঁতের ডাক্তার । 

আজ একা একা তাই একটু ভয় ভয় ও লাগছে। 

গাড়িতে বসে বসে ঠিকাদারের সকল ডিটেলস এর উপর নজর বুলাচ্ছি,একটা বিষয়ে বারবার আমার খটকা লাগছে, তা হলো-

         পুরো জেলার সকল কাজ সেই করে। অন্য কোনো ঠি কাদার তার কাছে কোনো চান্জ ই পায় না। 

নোট করার মতো আরেকটা বিষয় হলো,

সে সকল কাজ করে আড়ালে থেকে, প্রকাশ্যে খুব কম আসে। 

আসলেও তার বিশেষ বাহিনী তাকে সর্বোপরি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখার চেষ্টা করে। 

হটাৎ মনে পড়ে গেলো, আজকে ইটখোলায় কিছু একটা হতে পারে। 

সাথেসাথে আসফাককে ফোন দিলাম-

  হ্যালো,, আসফাক। 

- জ্বি স্যার। 

কি অবস্থা বলো?

  -স্যার,, আজকে বিশাল অবস্থা ইটখোলায়। 

মানে! স্পষ্ট করে বলো?

- ইটখোলা আবার নতুন করে চালু করার ঘোষনা দিয়েছে,। 

আচ্ছা..

তুমি জানার চেষ্টা করো কারা নতুনভাবে আবার চালু করছে?

আর অলটাইম আমাকে আপডেট দিবে। 

-জ্বি স্যার। 


রফিককে ফোন দিয়ে প্ল্যান B এর কথা মনে করিয়ে দিলাম, পুরো শহরে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিতে বললাম,

আর কিছু পুলিশকে সিভিল ড্রেসে ইটখোলায় পাঠিয়ে দিতে বললাম রফিককে,। 

যাতে করে তারা সর্বদা নজর রাখতে পারে ঠি কাদারের উপর। 


লক্ষ্য করলাম আমার গাড়ি ধীরেধীরে স্লো হয়ে আসছে,

কিন্তু শহরতো আরো অনেক দূরে। 

ব্যাপারটা আমার কাছে সুবিধের মনে হলো না,

সাথেসাথে একলাফে সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে চলে এলাম,এতক্ষণে আমার হাত চলে গেলো পিছনে থাকা রিভলভারের কাছে। 


ড্রাইভারের কানের উপর রিভলভার ধরে আছি, 

তাকে বলছি-

            কোনো রকমের চালাকি করার চেষ্টা করা হলে সোজা উপরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে,

      দেখলাম রীতিমতো সে কাঁপছে। 

ড্রাইভার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলা শুরু করলো-

স্যার আমাকে টাকা দেওয়া হয়েছে এ কাজ করার জন্য। 

কত টাকা?

-স্যার,, পাঁচ হাজার। 

আমি ড্রাইভারকে বললাম ,তোকে আমি একহাজার টাকা বেশি দিবো, তুই বল ওরা তোকে কি কি করতে বলেছে?

- স্যার,, আমি গাড়ি নিয়ে আপনার বাসার সামনে দাঁড়িয়   ছিলাম, ঠি ক তখনি চার পাঁচজন মুখোশ পরা লোক আমার কাছেএসে বলে-

যদি বেঁচে থাকতে চাস তাহলে যা যা বলবো তা ভালোভাবে করবি। 

 আর তুমি রাজি হয়ে গেলে?

- তারা আমাকে হুমকি দিয়েছে, যদি না করি তাহলে গাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে পেট্রল দিয়ে আমাকে সহ জ্বলিয়ে দিবে। 

আমি আঁতকে উঠলাম তার কথা শুনে। 

আমি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম-

ওরা এখন কোথায়?

- স্যার আমাদেরকে পিছন থেকে ফলো করছে। 

*বিপদ মাথার উপর ঘুরছে*

সাথেসাথে ড্রেস অদলবদল করে ফেললাম,

ড্রাইভারকে আমার ড্রেস পরিয়ে পিছনে বসিয়ে দিলাম ,

আর আমি ড্রাইভারের ড্রেস পরে ড্রাইভ করা শুরু করলাম ,,

গাড়ি সোজা চালাচ্ছি না,আঁকাবাঁকা করে চালাচ্ছি

যাতে করে টার্গেট মিস হয়ে যায়। 

ফেঁসে যাবো কিন্তু এভাবে ফাঁসবো কল্পনাও করিনি,

কাউকে যে ফোন দিয়ে  সাহায্য চাইবো তার ও কোনো সুযোগ নেই। 


ড্রাইভারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে আওয়াজ না পেয়ে পিছনে তাকালাম-

দেখলাম বুলেটের  আঘাতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে ড্রাইভারের শরীর। 

পুরো গাড়ি তাজা রক্তে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। 


হটাৎ চারদিক নিরব হয়ে গেলো, মনে হচ্ছে এতক্ষণ সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। 

কিন্তু আমার পিছন পড়ে আছে তাজা লাশ, যার শরীর থেকে এখনো তাজা রক্ত ঝরছে। 


ওরা ওদের অপারেশন সম্পন্ন করে চলে গিয়েছে এতক্ষণে,

কিন্তু ওরা জানেনা যে ওদের টার্গেট মিস হয়ে গেছে। 


এতদিনে আজ ফাস্ট ওরা আমার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে,

প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আমি, 

    যদি আজ একটু এদিক সেদিক হয়ে যেতো,

তাহলে আমি জ্যান্ত লাশ হয়ে যেতাম। 


লাশটাকে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠিয়ে দিলাম জেলা মেডিকেল কলেজে। 


 আমি  হাতের প্রচন্ড যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পাশের ফার্মেসী থেকে তুলা, ব্লেড,আর কাঁচি নিয়ে নিজের হাতে নিজেই অপারেশন শুরু করে দিলাম। 

কেউ যে আমাকে ধরবে তার কোনো ব্যবস্থা  নেই। 

নিজের হাতটাকে প্রথমে গাড়ির স্টেয়ারিং সঙ্গে বেঁধে নিলাম, তারপর ড্রেসিং করে নিয়ে ব্লেড দিয়ে জায়গাটা কেটে নিলাম,

ভিতরে দেখতে পেলাম বুলেটর চিকন অংশ, ঢুকিয়ে দিলাম কাঁচি,

আস্তে আস্তে উপরের দিকে টেনে আনতে শুরু করলাম।

আমার যন্ত্রণামুখর চিৎকারে ভারি হয়ে উঠছে গাড়ির ভিতরের পরিবেশ,

ব্যথায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম আমি। 

সজাগ হয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলাম বাসার বেডে, আশেপাশে পুলিশ সদস্যদের ঢল। 

সবার মুখ শোকার্ত,। 

রফিককে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন দেখলাম। 


সবাই আমার সামনে বসে আছে, সবার মুখে একটাই প্রশ্ন-

 স্যার আপনি কেনো একা গিয়েছিলেন,

প্রয়োজনে টি ম নিয়ে যেতেন। 

তাহলে তো আজ এই অবস্থা হতো না।


সবার ভালোবাসা দেখে চোখ দিয়ে দু'ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। 

রফিক বলা শুরু করে দিলো-

স্যার চাকুরী জীবনে কেউ র জন্য এতো কষ্ট হয়নি,

নিজের মেয়ের জন্য ও হয়নি। 

আজ আপনার এই অবস্থা দেখে যতটা কষ্ট হচ্ছে। 

আপনি যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যেতেন। 


সবার ইমোশনাল কথাবার্তা শুনে নিজেও ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছিলাম,

কিন্তু এই মূহর্তটা ইমোশনাল হওয়ার মূহর্ত না। 

সবাইকে সবার কাজে পাঠিয়ে দিলাম। 


আমি হাতের ব্যান্ডেজ নিয়ে উঠার চেষ্টা করলাম,

ঠিক তখনই রফিক দৌড়ে এসে বললো-

স্যার ডাক্তার বলেছে এক সপ্তাহ রেস্ট নেওয়ার জন্য এবং কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ না করার জন্য। 

এক সপ্তাহ রেস্টের কথা শুনে আমি অবাক হলাম। 

রফিককে বললাম-

তুমি কিছু বুঝো?

এক সপ্তাহ তো রেস্ট নেওয়া ইমপসিবল!


পরনে নতুন প্যান্ট দেখে আমি আঁতকে উঠলাম,

চেঁচিয়ে রফিককে জিজ্ঞেস করলাম আমার পরনের আগের প্যান্ট কোথায়?

-স্যার বাথরুমে। 

তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো?

-জ্বি স্যার। 

প্যান্টের পিছনের পকেটে আমার মূল্যবান জিনিস দুটো পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম,কারণ এই দুটি জিনিস আমার জীবনের চেয়েও দামী। 


রফিককে বললাম -

গাড়ি বের করার জন্য। 

রফিক দুই চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে গাড়ি বের করতে চলে গেলো। 

বেচারা হয়তো ভাবছে, স্যার এই

মূহর্তে গাড়ি নিয়ে কোথায় যাবে?  

আর ঠি ক এই  সময় আমার মাথার যে কি গিজগিজ করছে তা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা;। 

মাথায় শুধু ডেন্টাল হাসপাতাল, সিমকার্ড আর অপরাধী পর্যন্ত পৌছানো। 


আমি আর রফিক রওনা করলাম ডেন্টাল হাসপাতালের উদ্দেশ্য , 

আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে,

এ যেন এক রাজ্য জয়ের প্রতিযোগিতা। 


রফিককে বাইরে বসিয়ে আমি হরিপদ কুমারের চেম্বারে প্রবেশ করলাম। 

সিভিল ড্রেসে থাকার কারণে প্রথমে তেমন একটা পাত্তা দিলো না। 

পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে আমার প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে উঠল ডাক্তার হরিপদ কুমার। 

আমি প্রথমে শুরু করলাম-

ডাক্তার সাহেব আমি আপনার শরণাপন্ন হয়েছি কোনো অসুস্থতার কারণে নয়,

মনে হলো ডাক্তার সাহেব একটু ভড়কে গেছেন আমার কথা শুনে। 

এইবার ডাক্তার সাহেব উল্টো প্রশ্ন করলো-

তাহলে এমন কি জরুরী কাজে আমার কাছে এসেছেন?

আমি পকেট থেকে দাঁতের নকল অংশটা বের করে ডাক্তারের টেবিলের উপর রাখলাম। 

ডাক্তারকে বলালাম-

এক ঘন্টার মধ্যে এই দাঁতের সকল ডিটেলস চাই। 

- স্যার এত্ত তাড়াতাড়ি?(ডাক্তার বললো)

হ্যাঁ,,হাতে একেবারেই সময় নেই। 

ডাক্তার বললো-

ঠিকাছে আপনি বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করেন,

আমি ল্যাব থেকে পরিক্ষা করে সকল ডিটেলস আপনাকে জানাচ্ছি। 


আমি আর রফিক বাইরে বসে আছি, এদিকে আমার তো আর সইছে না। 

 এমন সময় লক্ষ করলাম রফিকের পকেটে আমার ফোন বেজেই চলছে,

রফিক বের করে আমাকে বলে উঠলো-

 -স্যার আসফাক ফোন করেছে। 

আমি তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করলাম । 

- হ্যালো স্যার। 

হ্যাঁ আসফাক বলো । শুনতে পাচ্ছি। 

- স্যার,, একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে। 

কি? জলদি বলো। 

- স্যার ইটখোলা নতুন করে চালু করছে প্রয়াত চেয়ারম্যান এর বড় ছেলে। 

ও কি কাজ করে?

- ও ঠিকাদারের কন্টাক্টটার। 

ও তাহলে এ ঘটনা না!

- স্যার কিছু বললেন?

-  না আসফাক,। টেক কেয়ার। 


আচ্ছা রফিক, কেসটার মোড় বারবার পাল্টাচ্ছে কেন?

সবকিছু গুছিয়ে আনার পর নতুন আরো একটা ঝামেলা    এসে কেস এর সাথে  যুক্ত হচ্ছে। 

- স্যার আমার মাথায় ও কিছু কাজ করছে না। 

রফিক !আমি পারবো তো?

- স্যার বুকে সাহস রাখেন আর বাহুতে বল রাখেন। 


এক ঘণ্টা পর..

এইবার আমি আর রফিক একসাথে প্রবেশ করলাম  ডাক্তারের চেম্বারে,

উদ্দেশ্য, যে কোনো প্রবলেম একসাথে মোকাবেলা করা। 

ডাক্তার শুরু করলো-

স্যার ছয়মাস পূর্বে তিনজন আলাদা আলাদা লোককে তিনটি দাঁত লাগিয়ে দেওয়া হয়। 

আমি জিজ্ঞেস করলাম-

   কয়দিনের ব্যবধানে?

 - স্যার,, একই দিনে। 

এরপর আর কাউকে এই মডেলের দাত লাগিয়ে দেওয়া হয়নি। 

আচ্ছা তাদের সবার ডিটেলস আছে?

 -হ্যাঁ স্যার আছে। 

তাড়াতাড়ি দেন। 

-স্যার প্রথম যাকে দাঁত লাগানো হয়, সে হলো প্রয়াত চেয়ারম্যান। 

ডাক্তারের কথা শুনামাত্র আমি চমকে উঠলাম, প্রয়াত চেয়ারম্যান মানে নতুন করে ইটখোলা যে চালু করছে তার বাবা। 

ডাক্তার সাহেব দ্বিতীয়জন কে?

-দ্বিতীয়জন হলো, চন্ডীপুর থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানাত। 

প্রচন্ড শকড খেলাম ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে, রফিক আমার দিকে ছানাবড়া চোখে তাকিয়ে আছে।

ডাক্তার সাহেব তৃতীয়জন কে?

- স্যার উপজেলার মেয়র। 

আমি টিকে থাকতে পারলাম না ডাক্তারের কথা শুনে। 

   আমি রীতিমতো কাঁপছি, আমার পাশে রফিক বেয়াকুফ এর মতো দাঁড়িয়ে আছে। 

এ তো এক বিশাল চক্র, এদেরকে ধরা তো এতো সহজ হবে না....


#পর্ব_৭


ডাক্তার হরিপদ কুমার থেকে দাঁতের ডিটেলসগুলো নিয়ে সোজা থানার দিকে রওনা করলাম। 

গাড়িতে করো কোনো কথা নেই, রফিক গাড়ি চালাচ্ছে। 

আমি আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখছি কারণ ইতিপূর্বে দু'তিনবার হামলার শিকার হতে হয়েছিলো। 

মাথায় একগাদা আলতু ফালতু চিন্তা গিজগিজ করছে,

কখনো এদিক সমীকরণ মিলাচ্ছি, আবার কখনো ওদিক সমীকরণ মিলাচ্ছি,  কিন্তু কোনোটাতেই স্থির হতে পারছিনা।

সবচেয়ে বেশি অবাক হচ্ছি সাবেক ওসির ব্যাপারটাতে,

এটা কিভাবে সম্ভব, যে কিনা ৯৯৯ কেস নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে নিজের ছেলে মেয়েকে হারিয়েছে, তার এই কেসের সাথে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, তা আমি কোনোভাবেই মানতে পারছিনা। 

নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে রফিককে জিজ্ঞেস করলাম-

রফিক তোমার কাছে সাবেক ওসি হাসানাত সাহেবের নাম্বার আছে?

- স্যার দেখতে হবে, তবে আমার কাছে না থাকলেও আসফাকের কাছে অবশ্যই আছে। 

আমি রফিককে বললাম, তুমি ব্যবস্থা কর, নাহলে আসফাকের কাছ থেকে ব্যবস্থা করে দাও,,

তাড়াতাড়ি । 

- জ্বি স্যার দিচ্ছি। 


রফিকের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে ওসি সাহেবের ফোনে ট্রাই করলাম,

সুইচ অফ দেখাচ্ছে। 

বিরক্তের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে আমি,

ওসির ফোন সুইচ অফ দেখে। পাবলিক ফোন এভাবে কেউ অফ করে রাখে নাকি?

কি যে সমস্যা এদের। 

রফিককে জিজ্ঞেস করলাম-

ওসির পারসোনাল কোনো নাম্বার আছে নাকি?

-হ্যাঁ স্যার,, অফিসে আছে।

রফিকের কথা শুনে মনে একটু প্রশান্তি অনুভব করলাম। 


কেসটার শাখাপ্রশাখা দিনদিন বেড়েই চলছে তার সাথেসাথে কেসটার প্রতি আমার আগ্রহ ও। 

কিন্তু টেনশন হচ্ছে রফিক আর আসফাককে নিয়ে, কবে যে ওরা বলে-

স্যার আপনার কেস আপনি ই সামলান, আমাদেরকে অন্য কোনো কাজ দেন, আমরা আর আপনার সাথে থাকতে পারছিনা। 


এতো কিছুর পরও আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি কিছু একটা করতে পারবো,

খুলে দিতে পারবো মানুষরূপী সিংস্র হায়েনাদের নোংরা মুখোশ। 

মানুষের জন্য মানুষ হয়ে কিছু করতে পারবো, তবে ইচ্ছেটা আমার ছোট কালের, আর ইচ্ছেগুলোর অনুপ্রেরণা পেয়েছি বাবা থেকে,

যখন কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরতাম, বাবাও তখন থানা থেকে বাসায় ফিরতো। 

বাসায় যদি বাবাকে ফুরফুরে মেজাজের দেখতাম তখন আমরা সবাই বুঝতে পারতাম যে,

বাবা হয়তো আজ কোনো অপরাধীকে ধরতে পেরেছে,না হয় কোনো অপরাধীর তেরটা বাজিয়ে ছেড়েছে। 

পুলিশ হওয়া আমার স্বপ্ন ছিলোনা, বাবার স্বপ্ন ছিলো। 

বাবার শুধু স্বপ্নই ছিলনা, ছিলো আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। 

যে স্বপ্নের ক্যানভাসে ছিল-

আমি হবো একজন সৎ, নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসার, অপরাধী আপরাধ করে আমার থেকে কখনো ছাড়া পাবেনা। 

বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষে আমি এগিয়ে চলছি দুর্বার গতিতে, যে গতি থামবার নয়, থামাবার নয়,,,। 


থানায় বসেবসে সিমকার্ডটা নিয়ে খোঁচাখুঁচি করছি, উদ্দেশ্য সিমকার্ড কানেক্ট করা। 

ব্যর্থ হয়ে ডাক দিলাম রফিক-

রফিক হেল্প প্লিজ। 

রফিক রিপ্লাই দিলো-

দাঁত বের একজোড়া মুচকি হাসি। 

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো রফিকের মুচকি হাসিটা আমার খুবই ফেভারিট। 

রফিককে বললামন-

রফিক সিমটা কানেক্ট হচ্ছে না কেন?

রফিক বললো-

স্যার আমার কাছে দেন।  

ওও কতক্ষণ খোঁচাখুঁচি করে আমার কাছে এসে বলে-

 -স্যার কানেক্ট হইছে, তবে প্রবলেমটা হলো অন্য জায়গায়। 

আমি জিজ্ঞেস করলাম-

কি সমস্যা..। 

-স্যার মোবাইলে কোনো নাম্বার নাই।

আহ রফিক কোনো সমস্যা নাই, 

তুমি কাস্টমার কেয়ারে এক্ষণি ফোন দিয়ে বলো-

আমি ক্রাইম ব্রাঞ্চ থেকে দারোগা রফিক বলছি, আমি   এই সিমকার্ডের সকল তথ্য চাই আগামী দুই ঘণ্টার মধ্যে। 

 মনে হলো আমার বুদ্ধিটা রফিকের মনে ধরেছে,

কোনোকিছু না বলে এক দৌড়ে নিজের কাজে চলে গেলো রফিক। 


পারসোনাল নাম্বারে ওসি সাহেবকে ফোন দিয়ে পেয়ে গেলাম। 

ওসি সাহেব ফোন রিসিভ করেছে-

হ্যালো কে কে?

স্যার আমি চন্ডীপুর থানার নতুন ওসি বলছি। 

- ও আচ্ছা.. কি অবস্থা আপনার?

স্যার দিনকাল তেমন ভালো যাচ্ছে না। 

- কেন? কি সমস্যা ?

স্যার কেঁচো খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যাচ্ছি,

বড় সাপটা ধরতে পারছি না। 

-আপনি কি আবোলতাবোল বকছেন?

কিছুই বুঝতে পারছিনা। 

স্যার কেস নং:৯৯৯ এর ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন?

আপনার নামটা কেন জানি বারবার আমাদের তদন্তের সামনে আসছে?

   এই ব্যাপারে আপনি কিছু বলে যান?

ওসি সাহেবের বুকের ভিতরের হাশপাশ শব্দ আমি মোবাইলের ভিতরেও শুনতে পাচ্ছি । 

বেচারার গলা শুকিয়ে মনে হচ্ছে কাট হয়ে গেছে, গলা দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা। 

স্যার ও স্যার আপনি যে কিছু বলছেন না(হস্যরসাত্বকভাবে)। 

-  ওসি সাহেব বললো -

-আমি এ ব্যাপারে আপনার সাথে কিছু বলতে চাচ্ছি না। 

 আমি ওসিকে বললাম-

আমি কিন্তু আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো। 

ঐপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফোনের দিকে তাকালাম,

বেচারা ফোন রেখে দিয়েছে। 


মাথা ঠান্ডা করে গত কয়েকদিনের সবগুলো বিষয় একটু মেলানোর চেষ্টা করলাম, শুধু মাঝখানে এসে পেঁচ লেগে যাচ্ছে । 

ওসি সাহেবের ব্যাপারটা শুধুমাত্র কাকতালীয়,না কোনো না কোনোভাবে সেও এই কেসের সাথে সম্পৃক্ত!

কে জানে?

আমি নিজেই এ ব্যাপারে কনফিউশনের মধ্যে আছি আর অন্যরা কি বুঝবে..?


 ইতিমধ্যে রফিক আসার রুমে এসে হাজির,

সে বলা শুরু করলো-

 -স্যার মোবাইল নাম্বার সম্পর্কে যাবতীয় সকল তথ্য জানা গিয়েছে। 

আচ্ছা.. ভেরী গুড, তাহলে তাড়াতাড়ি বলো। 

- মোবাইল নাম্বারটা রেজিস্ট্রেশন হয়েছে তাশফিয়া নামে একটা মেয়ের নামে। স্থায়ী ঠি কানা হচ্ছে বংশাল কলোনি রোড, গলি নং:৪। 

রফিক ওয়েট ওয়েট ওয়েট...

তাশফিয়া নামটা আমার খুবই পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছে। 

আচ্ছা তোমার মেয়ের নাম কি?

-স্যার ইথিকা। 

কিছুক্ষণ ভাবলাম,

কোথায় যেন নামটা শুনেছি শুনেছি মনে হচ্ছে। 

 হঠাৎ রফিকের জোরে নাম ধরে ডাকার কারণে চমকে উঠলাম, রফিক বলে উঠলো-

 -স্যার তাশফিয়া হচ্ছে সাবেক  ওসি সাহেবের বড় মেয়ের নাম,

যাকে হত্যা করে কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো। 

 আই সি...


তাশফিয়ার হত্যা তদন্তের ফাইলটা ড্রয়ার থেকে বের করার জন্য ড্রয়ারে চাবি ঢুকালাম,

ফাইলের উপর তেলাপোকা দেখে এক লাফে দু'হাত পেছনে চলে গেলাম। কিন্তু অবাক করা বিষয়টা হলো তেলাপোকা এক ইঞ্চিও সরলো না। 

                     রফিক দৌড়ে এসে তেলাপোকাটা নেড়েচেড়ে দেখলো,তারপর রফিক আমাকে যে তথ্য দিলো-

তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। 

 


-স্যার এটা একটা হাই ভোল্টেজের টেপ রেকর্ডার । 

কেমন রফিক?

-স্যার মোটামুটি পুরো থানা কভার করতে পারে; আমার যতটুকু মনে হচ্ছে,

এমন আরো অনেক পাওয়া যেতে পারে,বিশেষ করে আপনার বাসায়। 

মেজাজ পুরো হাই হয়ে গেছে এসব কান্ড দেখে,। 

 "বেড়া ক্ষেত খেয়ে ফেললে তো বেড়া দিয়ে কোনো লাভ নেই "। 

থানায় জরুরী মিটিংয়ে সবাইকে তলব করা হলো, রফিককে বললাম-

আসফাককে ফোন দিতে -

 যাতে করে তাড়াতাড়ি থানায় এসে হাজির হয়। 

-জ্বি স্যার। 

একবার যদি বদজাতটাকে পাই তাহলে নিশ্চিত আমি  তাকে ব্রাশফায়ার করে দিবে,(রাগের মাথায়)

এর দায়ে আমার চাকুরী থাকুক আর না থাকুক। 

আমার সাথে টক্কর, আমি খুব কম সহ্য করতে পারি, সে যেই হোক না কেন। 


মিটিং শুরু..

বন্ধুরা আমরা প্রতিদিন ই নতুন নতুন বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি,

প্রতিটা বিপদের পরিধি পূর্বের বিপদের থেকে কয়েকগুণ বড়। 

এক্ষেত্রে আমরা কোনটা ছেড়ে কোনটা করবো, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রান হয়ে যাচ্ছি । 

মাঝখান থেকে আসফাক বলে উঠলো-

-স্যার..আমার মনে হচ্ছে আজকের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন , এরজন্য আমার প্রত্যেকে সমানতালে দায়ী । 

আমার একক মত হচ্ছে এক্ষেত্রে থানার প্রত্যেক পুলিশ সদস্যদের দৈনন্দিনের চলাফেরা মনিটরিং করা হোক, এবং দিন শেষে আপনার কাছে রিপোর্ট আকারে পেশ করা হোক। 

আসফাকের কথাগুলো আমি শুনছি আর প্রত্যেক পুলিশের চেহারার দিকে লক্ষ করছি, তাদের চেহারার ভাবভঙ্গি দেখার জন্য । 

দু'তিনজনের চেহারার ভাব ভঙ্গিমা দেখে তাদেরকে খুবই অসন্তুষ্ট অসন্তুষ্ট মনে হলো। 


আবারো মিটিংয়ে:-

রফিককে বললাম-

ক্রাইম ব্রাঞ্চ এর আইটি এক্সপার্ট মনিরকে ফোন দেওয়ার জন্য।

কথাগুলো রফিককে বলে আসফাকের কানেকানে বললাম ,ধাওয়া করতে হবে দু'একজনকে রেডি থেকো। 

-জ্বি স্যার। 

ও রফিক তুমি মনিরকে বলে দিও,

  সে যেন এসেই সবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে, তেলাপোকার উপরে থাকা ফিঙ্গারের সাথে ম্যাচ করে। যার ফিঙ্গার ম্যাচিং হয়ে যাবে তাকে সরাসরি শুট করা হবে। 

আমার কথা শেষ না হতেই দেখলাম দুইজন উঠৈ বাইরের দিকে জোরেশোরে দৌড় দিচ্ছে, 

আসফাক আগে থেকেই সতর্ক  ছিল, তাই সেও পিছনে পিছনে দৌড়। আমি আরো চার পাঁচজনকে ও আসফাকের সাথে পাঠিয়ে দিলাম । 

কথা না বাড়িয়ে মিটিং তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলাম, কারণ, যে কারণে,মিটিং ডেকেছি তা সফল হয়েছে,

আমার উদ্দেশ্য ছিল-

 দু'একজন অপরাধীকে তৎক্ষণাৎ চিহ্নিত করে ধরে ফেলা।


বসে আছি বাসার স্পেশাল রুমে,আমার পাশে রাষ্ট্রীয় পোশাকের দু'জন গাদ্দার। 

যারা বাঁচে রাষ্ট্রের টাকায়, অথচ গাদ্দারি করে রাষ্ট্রের জনগণের সাথে। 

তদন্তের সার্থে বাঁচিয়ে রেখেছি, না হলে বহু আগেই উপরে পাঠিয়ে দিতাম। 

আমার স্পেশাল  রুমটা তৈরি করা হয়েছে ওভাবেই, এলাকার চোর,ডাকাত,পাতি মাস্তানদেরকে আমি আর কষ্ট করে থানায় নেই না। 

বাসায় আমার স্পেশাল রুমে একরাত রাখলেই মোটামুটি জীবনের সকল ভন্ডামী, মাস্তানি ছেড়ে একজন আদর্শ মানুষ হয়ে যায়।


পাশের রুমে থাকা রফিককে ডেকে বললাম-

আমার হিটার মেশিনটা আর স্টিলের পাইপটা দিয়ে যেতে, সাথে কিছু মোটা দড়ি। 

-জ্বি স্যার। 

ওরা এতক্ষণে আঁচ করতে পেরেছে  ওদের নম্র, ভদ্র, শালীন চেহারার স্যার কিছুক্ষণের মধ্যে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠবে।


নাহ! কোনো টর্চার করার আগেই দেখছি বাছাধনেরা স্বীকারক্তি দেওয়া শুরু করে দিয়েছে-

 -স্যার আমাদেরকে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা ইচ্ছা করে এমনটা করিনি। 

চুপ, চুপ,চুপ,, 

চোরের মুখে ধর্মের কাহিনী শুনার ইচ্ছা এই মূহর্তে একদমই নেই। 

আর কোথায় কি কি রেখেছিস তাড়াতাড়ি বল?

- স্যার থানায় আর নেই, তবে আপনার বাসায়,এবং আপনার..?

আমার কি?

 -স্যার আপনার মোবাইলের ভিতর ছোট্ট একটা ট্রেকার মেশিন লাগিয়ে দিয়েছি, 

এতে করে আপনি যেখানে যেখানে ফোন দেন,এবং যা   কিছু বলেন তারা সবকিছু ওখানে বসেই শুনতে পায়। 

কি! তাহলে আমার এতোদিনের প্ল্যান পোগ্রাম সবকিছু মাঠে মারা গেলো। 

মনে হচ্ছে পৃথিবীটা বড়ই স্বার্থপর,,


কতদিন আগে লাগিয়েছিস তোরা?

তাড়াতাড়ি বল? 

নাহলে আমি তোদেরকে এই মূহর্তেই খুন করে ফেলবো ( রাগের মাথায়)

- স্যার দুইদিন হয়েছে। 

 আর আমার বাসায় কোথায় কোথায় আছে?

- ড্রয়িংরুমের ফ্যানের ভিতরে মোটরের সাথে একটা লাগানো আছে। 

আর কোথায় ?

- স্যার আপনার বেডরুমের বালিশের ভিতর একটা রাখা আছে। 

আরো আছে?

-জ্বি স্যার। গাড়ির ভিতর সিটের নিচে একটা রাখা আছে। 

রফিককে তাড়াতাড়ি বললাম এগুলো সরাতে। আমার মোবাইলটা পাঠিয়ে দিলাম আসফাকের কাছে, যাতে করে ও প্রবলেম সলভ করে নেয়। 


তোরা কার হয়ে কাজ করছিস ?

 -স্যার কিছুদিন আগে বেনামী একটা নাম্বার থেকে আমাদের কাছে ফোন আসে?

কি বলা হয়?

স্যার আমাদেরকে বলা হয়-

যদি তোরা তোদের পরিবারকে বাঁচাতে চাস,তাহলে যেভাবে বললো সেভাবে শুনবি। আর যদি একটু এদিক সেদিক করিস, তাহলে তোদের পরিবারের সবাইকে এক এক করে নির্মমভাবে খুন করা হবে। 

এরপর আমাদের একাউন্টে বিশহাজার টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 

তোরা তৎক্ষণাৎ আমাকে কেন জানাস নি?

 -স্যার,, আমরা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,

তাই আর আপনাকে জানাইনি। 

এ আচ্ছা..

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তোদেরকে টাকার লোভ ও পেয়ে বসেছিলো। 

তাই না?

- না স্যার। 

আচ্ছা বাদ দে, এবার বল-

  তোরা আমার বাসা, ডেস্ক, গাড়ির চাবি কোথায় পেয়েছিস ?

-স্যার একদিন দুপুরে ডিনার করার জন্য আপনি চাবিগুলো অফিসে রেখে চলে যান। তখন আমরা চাবিগুলোর ডুবলি করে ফেলি। 

     ওদের নিঁখুত চক্রান্তের কথা শুনে আমি একেবারেই হতভম্ব হয়ে যাই।


মাথা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে আমার, এতদিনের কষ্ট ,সাধনা

সবই কি শেষ?

তাহলে কি আমি হেরে গেছি? 

মনেতোলা স্বপ্নের পাহাড় কি অপরাধীর  আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে?

ধর্ষিতা তরুণীদের মা-বাবাকে দেওয়া ওয়াদা কি ওয়াদাই থেকে যাবে, 

তা কি আর বাস্তবায়ন হবেনা?

চন্ডীপুরের জনগণ কি আরো একবার হতাশ হবে আমাদের থেকে?

এটা কি আমার উর্দির সাথে বেইমানি হবে না?

এমন হাজারো প্রশ্নের জাহাজ আমার মস্তিষ্কের ভিতর রীতিমত ঢেউ তুলছে,

এ যেন এক প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস,যা আমাকেও গ্রাস করে ফেলছে তার বাতাসের ঘূর্ণিতে। 


রফিকের চেঁচামেচি শুনে দৌড়ে স্পেশাল রুমের দিকে গেলাম,

রক্তে রক্তাক্ত হয়ে  মেঝেতে পড়ে আছে জীবন্ত দুটি লাশ,

কুড়ালের আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সমস্ত শরীর। 

রক্তের উষ্ণ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত রুমজুড়ে। 

 খুনি রুমের ডানপাশের জানালা এবং থাই ভেঙ্গে ঢুকেছে,

আর এই কাজটা খুনি করেছে খুবই নিপুণতার সাথে। 

হত্যার প্ল্যানিংটা হয়েছে গ্রেফতারের  পরপরই। 

 ওরা কিভাবে জানলো,

গ্রেফতারের কথা!


আমি দৌড়ে ছাদের উপরে গেলাম-

চাদের কোণে পড়ে থাকলে দেখলাম ধীরেধীরে সুস্থ হয়ে উঠা কুকুরের দ্বিখণ্ডিত শরীর। 

আমি শিহরে উঠলাম, 

এই অবলা প্রাণীর তো কোনো অপরাধ ছিলোনা। 

একটি কেস এত্তগুলো হত্যা, নিজেকেই নিজের কাছে অপরাধী মনে হতে লাগলো। 

তাদেরও তো স্বপ্ন ছিলো পৃথিবীতে বেঁচে থাকার।আরো কত অপ্রকাশিত স্বপ্ন ।


একহ্রাস হতাশা নিয়ে নিচে তাকালাম,

দেখলাম গাড়িটা চলে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে, তবে তার সাথে রেখে গেছে দুটি জীবন্ত লাশ। 


রফিককে বললাম -

 লাশ দুটিকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে। আর পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা আমার ডেস্কের উপর রেখে দিতে। 

-জ্বি স্যার। 

আসফাককে ফোন দিলাম জরুরী একটা কাজে, কিন্তু আসফাকের ফোন বারবার সুইচ অফ দেখাচ্ছে। 

থানার টেলিফোনে ফোন করে আসফাককে চাইলাম?

তারা জানালো আসফাক নাকি সকাল থেকেই থানায় নেই। ওকে ফোনে ট্রাই করেও পাওয়া যাচ্ছেনা। 

রফিককে তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম,

যাতে সে পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসফাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। 


নিচের দোকান থেকে বেনামী নাম্বারটায় কল দিলাম,

রিং হচ্ছে,,

ঐপাশ থেকে ভেসে আসা আওয়াজ গুলো আমার কাছে খুবই পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছে...


    (চলবে )


লেখক_জাকারিয়া_শহিদ