কেস_নং_৯৯৯

#পর্ব_২_৩_৪


-স্যার সামনে মনে হচ্ছে বড় একটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। 

    সামনে বসা আসফাকের কখা শুনে আমি চমকে উঠলাম। 

 ড্রাইভার..গাড়ি তাড়াতাড়ি স্টপ কর। আমাদের এখনি এখান থেকে কেটে পড়তে হবে। 

আসফাককে জিজ্ঞেস করলাম ট্রাক আমাদের থেকে কতটুকু দূর হবে?

-স্যার ১০০মিটার হবে। 

আসফাককে বললাম, দেখো তো আশেপাশে কোনো ফ্যাশন হাউজ বা বিপণি বিতান আছে কিনা? 

যা করবে তাড়াতাড়ি করতে হবে। 

 আমরা ফেঁসে গেছি। 

-স্যার স্যার স্যার, কিছু কাপড়ের দোকান দেখা যাচ্ছে। 

আসফাক তুমি গাড়িটা নিয়ে কাপড়ের দোকানের সামনে চলো। 

 আমি দ্রুত আসফাককে তিনটা বোরকা কিনতে পাঠালাম।  

আসফাক তাড়াতাড়ি আনতে হবে?

 তবে খুব সাবধান। 


পাশে বসা কমবয়সী ছেলেটা যখন প্রশ্ন করলো, স্যার বোরকা কেন?

     ধমক দিলাম। 

চুপ কর ! 

আমার অবস্থা এদিকে খারাপ আর তুমি খুব ফুর্তিতে আছে। 

বললাম চিন্তা করো না,তোমার বউকে গিফট করবো। 

মনেমনে বললাম এদেরকে কে যে পুলিশের চাকুরী দেয়?

কিচ্ছু বুঝে না। 


আমরা তিনজন ই বোরকা পরে হাঁটা শুরু করলাম । 

আমি সতর্ক দৃষ্টিতে আশেপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। 

এমনিতে আমার প্ল্যানে একটু গড়মিল হয়ে গেছে, 

  সিভিল ড্রেসে আসা দরকার ছিলো আমাদের, আর থানার গাড়ি ব্যবহার করাটা মোটেও উচিৎ হয়নি। 

  অন্য কোনো গাড়িতে রওনা দিলে ঝামেলা একটু হলে ও কম হতো। 


যত দেরি হচ্ছে আমি ততবেশী উদ্বিগ্ন হচ্ছি রফিকের জন্য। 

ট্রাকের ভিতর থেকে চার থেকে পাঁচজন তাগড়া তাগড়া লোক বারবার আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। 

আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম, যদি এখানে ধরা পড়ে যাই তাহলে সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে। 


ট্রাকটাকে অতিক্রম করে কিছুদূর যাওয়ার পর রফিককে ফোন দিলাম। 

হ্যালো,, রফিক। 

-ঐপাশ থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনে আমি ভড়কে গেলাম। 

হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো,,

- স্যার রফিক সাহেবের বাসায় আগুন লেগে গেছে। 

    আপনি কে? রফিক সাহেব কোথায় ?

-আমি ওনার পাশের ফ্ল্যাটে থাকি। 

 ও আচ্ছা,,

 তাহলে কিভাবে আগুন লেগেছে ?

- স্যার কারা যেনো কেরোসিনের বোতলে আগুন লাগিয়ে জানালা দিয়ে নিক্ষেপ করে চলে গেছে । 

 সবাই ঠি ক আছে তো?

- হ্যাঁ, তবে ওনার ছোট মেয়েটার শরীরের কিছু আংশ পুড়ে গেছে। 

     

আচ্ছা তাহলে টার্গেট ওর ছোট মেয়েটা ই। বেচারা বেচারার প্ল্যান মতো কাজ শুরু করে দিয়েছে এতক্ষণে। 


আমি পুরো নিস্তব্ধ হয়ে গেছি, এতোগুলো জায়গা আমি একসাথে সামাল দিতে পারবো!

 নাহ! আমাকে পারতেই হবে। শুরু যেহেতু করেছি আমি এর শেষ দেখেই ছাড়বো। 


থানায় ফোন দিলাম, সম্পূর্ণ ফোর্স যেন ট্রাকটিকে ধাওয়া করে সবগুলোকে থানায় নিয়ে যায়। 


বাসার নিচের মানুষগুলো কে সরিয়ে কোনোরকম উপরের দিকে উঠলাম। 

দেখলাম রফিক পাগলের মতো এদিকওদিক ছুটাছুটি করছে। দেখে আমার খুব মায়া হলো। আজ আমার জন্যই এই অবস্থা তার। 

আমাকে দেখা মাত্রই কেঁদে উঠলো রফিক, সান্তনা দেওয়া ছাড়া আমি আর কি ই বা করবো তার জন্য, কারণ আমরা যখন চাকুরীতে জয়েন করেছিলাম তখন আমরা বুকে হাত রেখে শপথ করেছিলাম-

* প্রয়োজনে দেশের জন্য প্রাণ দিতেও সদাসর্বদা প্রস্তুত আমরা*


রফিকের মেয়ের তেমন মারাত্মক কিছু হয়নি, সামান্য ওষুধ নিয়ে তার পুরো পরিবারকে তাদের বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম , 

এখানে এখন থাকাটা পুরাই রিস্ক। 


ফোনের আওয়াজ পেয়ে রিসিভ করলাম। 

- স্যার ওখানে কোনো ট্রাক পাওয়া যায়নি। তবে থানার গাড়িটা সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। 

      আগুনের কোনো সূত্র পাওয়া গেছে?

- জ্বিনা স্যার।তবে গাড়ির পাশে কালো একধরনের তেল জাতীয় জিনিস পাওয়া গেছে। 

  আচ্ছা এগুলি তাড়াতাড়ি থানায় নিয়ে আসো।


আমি রফিককে নিয়ে বাসার দিকে রওনা করলাম। মাথা পুরাই খারাপ হয়ে গেছে আমার। 

    মাখায় কোনো কিছুই খেলছে না। কি করবো?

কোথা থেকে শুরু করবো?


 আমি আর রফিক বাসায় বসে আছি। চারদিক নিস্তব্ধ, নিরব,

কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা। 

রফিকের জোরালো আওয়াজ নিরবতা ভেঙ্গে ছারখার করে দিলো। 

সে বলা শুরু করলো-

      স্যার আমি পুরো কেসে আপনার সাখে থাকতে চাই, আর আমাদের সাথে আসফাককে ও নিতে পারেন, ছেলেটার মধ্যে প্রচুর প্রতিভা আছে, সে অনেক কিছু বোঝে। 

ওর বাবার প্রতিভার ছাপ ওর মধ্যে ও আছে। 

  আসফাককে বললাম-

ওকে এখনি ফোন দাও এখানে আসার জন্য। 

তাড়াতাড়ি কর?


আমরা তিনজন পাশাপাশি বসে আছি। 

আমি প্রথমে শুরু করলাম-

আমাদের তিনটা প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে হবে। 


প্ল্যান A: টানা এক সপ্তাহ ইটখোলায় আমাদের একজনকে থাকতে হবে। আমি এর জন্য আসফাককে ই চিন্তা করেছি। 


প্ল্যান B:পুরো এলাকা পুলিশের নজরদারির আওতায় আনতে হবে, এই কাজটা আমার দায়িত্বেই থাক। 


প্ল্যান C:সামনের দুই সাপ্তাহের জন্য সকল পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারকে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, এ কাজটা রফিক তুমি করবে।


রফিক এবং আসফাককে থানায় পাঠিয়ে দিলাম। 


ইতিমধ্যে দোকানদার চিকন সুতা, টিনে র ড্রাম, লোহার টুকরা দিয়ে গিছে। 

আমি সুতা ও  

টিনের ড্রামে কালো রঙ করলাম, যাতে করে রাতের আলোতে চেনা না যায়। 

রাতে খুব জটিল একটা কাজ আছে এ কথা চিন্তা করে একটু বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করলাম। 

কিন্তু ঘুম কোথায় যেন হারিয়ে গেছে, বারবার ই শুধু ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মাথায় বাড়ি খাচ্ছে। 


আমি কোথাও ভুল করছিনা তা??


হটাৎ নিচ থেকে থেকে শুনতে পেলাম দারোয়ান করিমের

গোঙানির আওয়াজ...


           

#পর্ব_৩_৪


সিঁড়ির উপর থেকে করিম মিয়ার কাতরানোর বিদারক দৃশ্যটা দেখছি,

কিন্তু নামার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নামতে পারছি না। 

  আর ঠিক এই মূহর্তে এভাবে একা নিচে নামাটা আমি সমীচীন মনে করছিনা, যে কোন সময় ওদের চক্রান্তে ফেঁসে যেতে পারি। 

 

তাদের হামলার যে কৌশল , তার প্রশংসা করতে হয়, স্টেপ বাই স্টেপ। টার্গেটের মধ্যে কোনো খুঁত নেই। 


মনে হচ্ছে খেলাটা বেশ জমে উঠেছে। 

আমিও খেলতে চাই,

দেখবো শেষ পর্যন্ত ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ কে হয়?


থানায় ফোন করলাম দ্রত অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য।  


আমিও পস্তুতি নিচ্ছি থানায় যাওয়ার জন্য। 

সবাইকে নিয়ে জরুরী একটা মিটিং করতে হবে। 


মিটিং শুরু..

   ঠি ক এই মূহর্তে আমরা যে অবস্থার মুখোমুখি,

আমাদের সবার জীবন ই হুমকির মুখে, তাই আমাদের পূর্ণ সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।

     মিটিং এর মাঝে ফোনের আওয়াজ পেয়ে রিসিভ করলাম-(বেনামী নাম্বার)

হ্যালো,, হ্যালো

- কিরে অফিসার তোর কলিজা তো অনেক বড়,

মরার খুব শখ না? মনে রাখিস পরের টার্গেট তুই। 

   টেক কেয়ার..। 


ফোনে হুমকির ধরন দেখে বুঝতে পারলাম, আগের মেসেজ করা ব্যক্তি আর এখন ফোন করা ব্যক্তি একজনই,

ভিন্ন কেউ নয়। 

 সকল পুলিশ সদস্যকে বলে দিলাম -

 আজ থেকে সকল প্রয়োজন, কাজকর্ম, থাকা, খাওয়া ,ঘুম সবই থানায় সারতে হবে, বাইরে যেতে হলে আমার অনুমতি লাগবে। আর কেউ যদি নিয়মের বহির্ভূত কাজ করে তাহলে সাথেসাথে ই সাসপেন্ড করে দেওয়া হবে। 

আরেকটা কথা, সবার সেলফোন এক্ষুণি আমার কাছে জমা দিবেন,

কারো কথা বলার প্রয়োজন হলে থানার টেলিফোনে কথা বলবেন। মনে রাখবেন আপনার একার ভুল আমাদের সবার জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। 

  "সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন"

আজকের মতো মিটিং এখানে ই সমাপ্তি ঘোষনা করছি। 


অফিসে বসে ৯৯৯ কেসের ফাইলটাতে চোখ বুলাচ্ছিলাম।  

ঠিক তখনই আসফাক কথা বলার অনুমতি চেয়ে প্রবেশ করলো। 

আমি অনুমতি দিলাম। (বলো)

- স্যার আমরা দুঃখিত,, আমরা করিমকে বাঁচাতে পারিনি

হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেছে। 

বেদনায় কলিজাটা কেঁপে উঠলো। ও তো নিরপরাধী ছিলো, কেন ওকে হত্যা করা হলো। 

প্রতিশোধের স্পৃহা চোয়লকে শক্ত করে তুললো। 


রফিক আর আসফাককে নিয়ে বাসায় রওনা করলাম সাথে কেসের ফাইলটা,

যে কোনো সময় ছিনতাই হয়ে যেতে পারে ফাইলটা এই ভেবে নিজের শার্টের ভিতরে রেখে দিলাম। 


আচ্ছা. রফিক এলাকায় কি কোন জায়গায় নতুন রাস্তার কাজ চলতেছে নাকি?

 -হ্যাঁ স্যার ইটখোলার পাশের কাঁচা রাস্তাটা পাকা হচ্ছে। 

 আই সি...। 

-কেন স্যার?

আমাদের গাড়ি পোড়ানোর জন্য যে কালো জিনিসগুলা ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলি রাস্তা পাকা করার ক্ষেত্রে পিজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

আমার যতটুকু মনে হচ্ছে পিজ ঐ জায়গার ই।

-তাহলে আমরা কি এখন রাষ্ট্রীয় সম্পদ পোড়ানোর দায়ে ঠি কাদারের বিরুদ্ধে মামলা করবো?

 না রফিক, আমাদের যা করতে হবে ভেবেচিন্তে করতে হবে। 

আমরা কেঁচো কে সাপের জন্য টোপ হিসেবে ব্যবহার করবো। 

-জ্বি স্যার। 

আমি আগামীকালের মধ্যে ঠিকাদারের সকল ডিটেলস       

চাই। 


ড্রাইভার জোরে ব্রেক করার কারণে সামনের সিটের সাথে বাড়ি খেয়ে প্রচন্ড ব্যথা পেলাম। 

আমি কিছু বলার আগেই ড্রাইভার বলা শুরু করলো-

স্যার রাস্তা থেকে কুকুর টা সরছে না, গাড়ি কি স্টপ করে দিবো?

নো স্টপ, নো স্টপ.. 

গাড়ির স্পিড বাড়াও, 

তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি। 

আসফাককে বললাম-

দেখো তো পিছনে আমাদেরকে কেউ ফলো করছে কিনা?

-না.. তবে কুকুরকে ঘিরে চার পাঁচজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। 

আমি আসফাক এবং রফিককে বললাম,

আমরা যদি দাঁড়াতাম তাহলে আজ বড় কোনো হামলার সম্মুখীন হতাম,

কুকুরকে রাস্তায় এভাবে রাখাটা ছিলো তাদের সুক্ষ্ম একটা কৌশল।


একটা ছেড়া লুঙ্গী আর ময়লা গেঞ্জি আসফাককে দিয়ে বললাম তাড়াতাড়ি পরে নিতে। ছাই দিলাম মুখে মেখে নিতে যাতে করে বুঝা যায় সে একজন জাত পাগল। 

আসফাককে বললাম-

সামনের এক সপ্তাহ তোমাকে এই ক্যারেক্টারটা ই প্লে করতে হবে। যে ক্যারেক্টারে তুমি থাকবে নাম পরিচয়হীন এক পাগল, যে কারো সাথে কথা বলে না। দিনরাত এক জায়গায় পড়ে থাকে, কেউ সরিয়ে দিলেও আবার আগের জায়গায় এসে পড়ে থাকে। 

আমার কথাগুলো শুনে আসফাক একটা হাসি দিল,

আমি গম্ভীর আওয়াজে বললাম-- 

এটা অনেক বড় একটা দায়িত্ব , অনেক সতর্ক থাকতে হবে, একটু এদিক সেদিক হয়ে গেলে বিরাট বড় প্রবলেম হয়ে যাবে। 

কথাগুলো মনে থাকবে কী?

--জ্বি স্যার। 

আমার বুটজুতা টা রফিককে আনতে বললাম। 

   জুতাটা একটা দড়ির মধ্যে বেঁধে আসফাকের গলায় জুলিয়ে দিলাম। 

   জুতার ভিতরে একটা ফোন আর কিছু বিড়ি রেখে দিলাম । 

 অথচ বিড়ির কোনো কাজ নেই তবে, মোবাইলের প্রচুর কাজ আছে। 


আসফাককে এই বেশে ই ইটখোলার সামনে খালি জায়গায় পাঠিয়ে দিলাম,

আজকের আসফাক এক নতুন আসফাক, যে একজন পরিচয়হীন পাগল। 


আমি আর রফিক রাতের প্ল্যান নিয়ে বসে পড়লাম। 

আমি সুতা আর লোহার টুকরা জ্যাকেটের ভিতরে রেখে দিলাম। 

টিনের ড্রাম দিলাম রফিকের দায়িত্বে। 


রফিককে ছাদে পাঠিয়ে দিলাম আশপাশটায় চোখ বুলানোর জন্য। 

আমি রুমের দিকে পা বাড়ালাম একটু নিদ্রার জন্য,

যাতে করে আজকের রাতটায় চন্ডীপুরের জনগনের কিছু একটা করতে পারি। 


রাত একটা ত্রিশ...

 আমি আর রফিক ইটখোলার চারপাশে মাটি থেকে এক আঙ্গুল উঁচু করে সুতাগুলো বাধছি। 

আমি রফিককে বললাম সবগুলো সুতার মাথা একসাথ করে আমার হাতে দেওয়ার জন্য। 

এমন সময় রফিক বলে উঠল-

 স্যার একজন বুড়ো পাগল আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে ।

রফিকের কথা শুনে 

           আমি মুচকি হেসে উঠলাম.


 "বুড়ো পাগল"আমাদেরকে দেখেও না দেখার ভান করে কিছু একটা বলতে বলতে সামনের দিকে চলে গেলো। 

মনেমনে ভাবলাম,, 

বেচারা আসফাক তার প্রতিভার সাক্ষর পূর্ণভাবে রাখার চেষ্টা করছে। 


সবগূলো সুতার মাথা একসাথ করে লোহার টুকরায় বাঁধলাম। আর লোহার টুকরা টি নের ড্রামের ভিতর রেখে ইটখোলার ভিতরে হাঁটা ধরলাম।  

আমি রফিককে জিজ্ঞেস করলাম-

তোমার কি মনে আছে হত্যাগুলো কোথায় হয়েছিলো?

- হ্যাঁ স্যার। সামনে গিয়ে দক্ষিণের রুমটায়। 

ও আচ্ছা.। আসো তাড়াতাড়ি। 

 রফিক বললো-

স্যার ড্রাম টা কি নিয়ে আসবো?

হ্যাঁ অবশ্যই। এই বিপদের মূহর্তে এই ড্রামটাই আমাদের একমাত্র সম্বল। 

- স্যার ড্রাম দিয়ে আমাদের কি হবে?

আরে বোকারাম,, 

কেউ যদি আমাদেরকে অনুসরণ করে ভিতরে ঢুকার চেষ্টা করে তাহলে তার "পা" দু'জোড়া সুতায় আটকা পড়ে যাবে। 

ঠিক তখনই ড্রামের ভিতরে লোহা আমাদেরকে আওয়াজ করে সিগন্যাল দিবে। 

আমাদের তখনই পূর্ণ সতর্ক হয়ে যেতে হবে। 

 

আমি রফিককে বললাম-

তুমি এখানে দাঁড়াও,

আমি হত্যাকান্ডের রুম থেকে একটু ঘুরে আসি। 

- জ্বি স্যার। 


রুমের চারদিকে নীরব,নিস্তব্ধ,

গুমোট অন্ধকারে ছেয়ে আছে রুমের চারদিক। অজানা এক আতঙ্ক অনুভব করছি আমি। 

পকেট থেকে ছোট্ট টর্চ বের করে জ্বালালাম,

জমাটবদ্ধ রক্তের দাগ এখনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো রুম জুড়ে। 

চোখের সামনে ভেসে উঠলো ভয়াল হত্যাকান্ডের বীভৎস দৃশ্য। 

মনে হচ্ছে তরুণীদের একটু বাঁচার আকুতি কানে এসে বারবার বাড়ি খাচ্ছে। 

আমার পুরো শরীর প্রতিশোধের স্পৃহায় বারবার আড়ষ্ট হয়ে আসছে। 

কিন্তু আমি পারবো??

আমাকে পারতেই হবে..?


রক্তের দাগগুলোর উপর হাত বুলালাম,

মাটির সাথে মিশে একাকার হয়ে আছে, 

হয়তো তার সাথে তিলেতিলে গড়ে তোলা স্বপ্নের বৃহৎ আংশগুলো।  


 কষ্টে পাশে থাকা ইটের মাঝে সজোরে তিন চারটা লাথি মারলাম । 

ইটগুলো ছিটকে একটু দূরে গিয়ে পড়লো, তার সাথে ছোট্ট কিসের যেন একটু টুকরাও!

আমি দৌড়ে গিয়ে টুকরাটা উঠিয়ে নেড়েছেড়ে দেখলাম। 

মনে হচ্ছে একটা সিমকার্ড। 

আরো একটু ভালোভাবে দেখে নিশ্চিত হলাম-

সিমকার্ড ই।

খানিক দূরে চকচকে একটা দাঁতের অংশ দৃষ্টিগোচর হলো,

আমার চক্ষুদ্বয় জ্বলজ্বল করে উঠলো।

দাঁতটা উঠালাম,

দেখে মনে হলো আসল না,

নকল। 

সিমকার্ড আর দাঁতের অংশটা পকেটে ঢুকাতে যাবো,এমন সময় বাহির থেকে রফিকের আওয়াজ ভেসে আসলো-

স্যার স্যার স্যার..

তড়িঘড়ি করে বাহিরে বের হলাম

দেখলাম রফিক দাঁড়িয়ে আছে,আমি কিছু বলতে যাবো তখনি সে আমাকে হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বললো,

আমি সম্পূর্ণ নিশ্চুপ হয় দাঁড়িয়ে গেলাম। 

কারো মুখে কোনো কথা নেই,,

নিশ্চুপ আমরা;


আমি ধিরেধিরে রফিকের কাছে গেলাম, কি হয়েছে জানার জন্য। আমি রফিকের কানে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

কি সমস্যা?

 -স্যার একটা কুকুর অনেকক্ষণ ধরে কি যেন খুঁজছে। আমাকে দেখা মাত্রই ঘেউঘেউ শুরু করে দিয়েছে । 

 আই সি..!

শত্রু আমাদের আশেপাশেই আছে, যে কোন সময় ভিতরে ঢুকে হামলা করতে পারে। 

আচ্ছা রফিক কুকুর এখন কোথায়?

 -স্যার আমি একটু আড়াল হওয়াতে খুঁজতে খুঁজতে ভিতরে দিকে চলে গেছে। 

আমি পকেট থেকে ধারালো সুরু চাকুটা বের করে হাতে নিলাম, আর রফিককে বললাম-

একটা মাঝারি সাইজের ইটের টুকরা আর দুইহাত লম্বা দড়ি নেওয়ার জন্য। 


আমি আর রফিক কুকুরকে খোঁজার জন্য ভিতরের দিকে হাঁটছি, উদ্দেশ্য কুকুরটাকে হয়তো মেরে ফেলবো, না হয় বাঁচিয়ে রেখে নিজেদের কাজে লাগাবো। 

স্যার স্যার স্যার..

সামনে কুকুরকে দেখা যাচ্ছে,,। 

আমি আর রফিক একটু আড়ালে সরে দাঁড়ালাম। 

আমি অপেক্ষা করছি, বরাবর এলেই কুকুর কিছু বোঝার আগেই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বো।


      আমি কুকুরটির উরু বরাবর চাকু বসিয়ে দিলাম, আর ইটের টুকরাটা মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে দিলাম । 

রফিক আমাকে বললো-

স্যার প্রচুর রক্ত পড়ছে, এখন কি করবো?

আমি আমার শার্টটি ছিঁড়ে কুকুরের ক্ষতস্থানে পট্টি বেধে দিলাম। 


আমার জ্যাকেটের ভিতর কুকুরকে ঢুকিয়ে জ্যাকেটের চেইন ভালোভাবে আটকিয়ে দিলাম। 


ঘড়ির দিকে তাকালাম-

রাত চারটে একচল্লিশ মিনিট। 

   রফিক,, আমাদের আরো বিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে,

এর আগে কোনোভাবে ই এখান থেকে বের হওয়া যাবেনা। আর যদি বের বের হই, তাহলে তাদের বিছানো জ্বালে আটকা পড়ে যাবো। 

বুঝতে পেরেছো??

-জ্বি স্যার। 

রফিক আমাকে প্রশ্ন করলো-

স্যার কুকুরটাকে কি করবো?

যদি বেঁচে থাকে তাহলে নিয়ে যাবো আর যদি মরে যায় তাহলে বাইরে থাকা পাগলটার জিম্মাদারে রেখে যাবো,

ও কোনো একটা ভিত করে নিবে নি। 

রফিক আমার কথা বুঝতে পেরে একটা মুচকি হাসি দিলো, সাথে আমিও। 

তবে এই ভয়াবহ মূহর্তে আমার হাসি দেওয়ার আরো দুটি কারণ ও আছে,

এক: কুড়িয়ে পাওয়া সিমকার্ড। 

দুই: ভাঙ্গা দাঁতের নকল অংশ। 

আমি পূর্ণ আশাবাদী এই দুইটা জিনিস দ্বারা আমি অপরাধীর সীমানা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো। 


ইতিমধ্যে বাইরে আলো ফুটতে শুরু করেছে, চারদিকে পাখিরা মন খুলে গান গাইছে। 

আজকের সকাল আমার একটু ভিন্ন মনে হতে লাগলো,

      আজ আমারো পাখিদের সূরে গান গাইতে ইচ্ছা করছে। 


পাগল(আসফাক) কে দেখলাম আমাদের চারপাশ দিয়ে বানরের মতো ঘুরঘুর করছে। 

রফির আসফাককে নাম ধরে ডাক দিতে গিয়েও অজানা এক দায়বদ্ধতার কারণে ডাক দিতে পারলো না। 

  আসফাক আমার দিকে তাকিয়ে আছে,

আমি আসফাককে ছোট্ট করে একটা চোখ টি প দিলাম,

ও মর্মটা বুঝতে পেরে চারপাশটায় চক্কর দেওয়ার জন্য চলে গেলো। 

কিছুক্ষণ পরে এসে ও ও আমাকে ছোট্ট করে একটা চোখ টি প দিলো। 

বুঝতে পারলাম আশপাশ ক্লিয়ার, এখন আমরা বাসার দিকে রওনা করতে পারি...

  (চলবে)


লেখক_জাকারিয়া_শহীদ