কেস_নং_৯৯৯

 পর্ব_১

লেখক_জাকারিয়া_শহিদ



বেনামী নাম্বার থেকে আমার মোবাইলে একটা মেসেজ এসেছে তাতে লিখা-

            "ওসি সাহেব আপনাকে স্বাগতম চন্ডিপুর থানায়। 

যদি পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চান তাহলে ৯৯৯ নাম্বার কেসের ফাইলটা আলমারির শেষ তাকেই রেখে দেন।আর যদি কেসটা ওপেন করার চেষ্টা করেন তাহলে ১০০০ নাম্বার কেসটা হবে আপনাকে গুম করার মাধ্যমে। 

শরীরের প্রতি খেয়াল রাখবেন। গুড বাই"। 


        জয়েন না করতে ঝামেলা শুরু। মাত্র আজকে জয়েন করেছি তাতেই হুমকি শুরু হয়ে গেছে। কে জানে কোন আস্তানায় এসে পড়েছি,যেখানে মেসেজ করে করে জীবনের হুমকি দেওয়া হয় তা আবার থানার ওসিকে।


কেসটার প্রতি আমার একটা ইন্টারেস্ট কাজ করছে,কি এমন কেস যার জন্য এতো হুমকি ধমকি। নাম্বারটায় ফোন দিয়ে ট্রাই করলাম কিন্তু সুইচ অফ। 

রাতে তেমন কিছু না করে ঘুমিয়ে পড়লাম কারণ সকালে অফিসে যেতে হবে। 


 নতুন এলাকা,নতুন থানা, সবকিছুই নতুন। সবার সাথে পরিচয় পর্বটা সেরে কাজে মন দিলাম। 

হাবিলদার রফিককে ডেকে বললাম ৯০০থেকে এই পর্যন্ত যত কেসের ফাইল আছে সবগুলো এনে দিতে। 


আমি এক এক করে ফাইল গুলা দেখছি,

কি বিচিত্র এলাকা রে,হাঁস মুরগি চোরে নিয়ে গিছে,তাই অজ্ঞাত চোরদের বিরুদ্ধে মামলা করে রেখেছে। 

৯৯৮ তে এসে ফাইল শেষ। 

রফিককে আবার ডাক দিলাম-

কি ব্যাপার, ৯৯৯ নাম্বার ফাইলটা কোথায়?

-না মানে, ইয়ে মানি,,?

- ইয়ে ইয়ে করছেন কেনো? উত্তর দেন?

-স্যার আমি নতুন জয়েন করেছি আমি জানিনা। 

-সবাইকে এক মিনিটের মাঝে আমার অফিসে ডেকে পাঠানোর জন্য বললাম । 

   শুনুন..সবাইকে একটা বলে রাখি,

 আজ থেকে সব কিছু নতুনভাবে শুরু হবে এই থানায়। কোনো লুকোচুরি চলবে না আমার সাথে। কথাগুলো যেন সবার মনে থাকে। 

আরেকটা কথা ৯৯৯ নাম্বার কেসের ফাইলটা আমি আগামীকালের মাধ্যে চাই। 

 রফিককে বললাম আপনি আমার সাথে আমার বাসায় চলেন। 

-হ্যাঁ স্যার। 

আপনি এই থানায় কতো দিন যাবৎ আছেন?

-স্যার, ৬ বছর ধরে আমি এই থানায় আছি। 

কেনো সংকোচ ছাড়া আপনি আমার ৯৯৯ সম্পর্কে কিছু বলেন। 

-স্যার আপনি ওটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। আপনার বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। 

ধমক দিলাম তাকে, তাড়াতাড়ি বলেন। 

আর আপনি এই বিষয়ে কোনো ভয় পাবেন না। 

-স্যার, আজ থেকে ছয়মাস আগে একটি পরিত্যক্ত ইটখোলায় তিনটা মেয়েকে ধর্ষণের পর খুব বাজেভাবে খুন করা হয়। 

কেমন?

- তাদের স্তনগুলো দু'খন্ডিত অবস্থায় বাড়ির পেছনে পাওয়া যায়।প্রতিটি মেয়ের হাত কেটে তাদের যৌনাঙ্গ দিয়ে ঢুকিয়ে রাখা হয়। মুখগুলো থেঁতলে দেওয়া হয়।

  তাদের পরিচয় সনাক্ত করা গেছে?

-হ্যাঁ স্যার। 

  তারা কি এই গ্রামের?

-না স্যার; পাশের গ্রামের তবে তিনজন ই আপন বোন। 

কোনো মামলা হয় নাই কারো বিরুদ্ধে? সন্দেহজনক কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি?

-মামলা হয়েছে তবে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। 

আপনার আগের ওসি সাহেব কেসটাকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করার দুইদিনের মাঝে তার বড় মেয়েকে খুন করে কচুরিপানার ভিতরে লুকিয়ে রাখা হয়, পরবর্তীতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এর কয়েকদিন পর তার ছোট ছেলেটাও গুম হয়ে যায়,এখনো পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

ও আচ্ছা! 

এটা তো দেখছি বিশাল একটা সাজানো প্ল্যান। 

যেই এই কেস নিয়ে কাজ শুরু করে তার ই কোনো না কোনো একটা ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। 

মেয়েগুলোর কোনো ছবি আছে থানায়?

-হ্যাঁ আছে। 

রফিক মিয়ার চোখে পানি দেখে জিজ্ঞেস করলাম-

কি হলো? কাঁদছেন কেনো?

- স্যার আমাকে ও ওয়ার্নিং দিয়ে রেখেছে, যদি এই কেস সম্পর্কে কাউকে কোনো তথ্য  দেই তাহলে আমার ছেট মেয়েটার সাথে একই অবস্থা হবে যেমনটা হয়েছিলো ওসি সাহেবের মেয়ের সাথে। 

আমার প্রচন্ড ভয় করছে যদি আমার মেয়ের কিছু হয়ে যায়। 

      আপনি চিন্তা করবেন না, আমি আপনার সাথে আছি। 

ও আপনার কাছে কোনো মুদি দোকানদারের নাম্বার আছে?

-হ্যাঁ আছে। 

ফোন দেন তো এখানে আসার জন্য। 

-ঠিকাছে। 

আপনি এখন যেতে পারেন, ও আরেকটা কথা 

খুব সাবধান এ ব্যাপারে, কেউ যেন কোনো কিছু টের না পায়,এমনকি আপনার পরিবার ও না।  

কথাগুলো আপনার আমার মধ্যে থাকবে থানার কারো সাথে ও আলাপ করা যাবে না। 


কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখি অপরিচিত একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। 

জিজ্ঞেস করলাম কে আপনি?

 -আমাকে এখানে আসতে বলা হয়েছে। 

ও আচ্ছা,, মুদি দোকানদার আপনি?

-হ্যাঁ। 

বাইরে আশেপাশে কোনো গাড়ি বা লোককে দেখেছেন?

- স্যার বাইরে তেমন কেউ নাই তবে দুইজন লোককে দেখলাম মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। 

বুঝতে পারলাম আমার পিছনে লেগে গেছে বেছারার লোক, তারা আমাকে চোখে চোখে রাখছে, আমি কখন কার সাথে কি করছি সব মনিটরিং করছে। 

  সাথেসাথে রফিক মিয়াকে ফোন দিলাম-

আপনি কোথায়?

-স্যার বাসায়। 

শুনুন কোনো অবস্থাতেই আমি আসার আগ পর্যন্ত কোথাও বের হবেন না, এমনকি দরজা ও খুলবেন না। 


    দোকানদারকে নিয়ে থানার দিকে রওনা করলাম। বাসার বাইরে দেখলাম লোকগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে

আমাকে দেখা মাত্রই বাইক নিয়ে সামনের দিকে চলে গিয়েছে। 

অবস্থা আস্তে আস্তে জলিল হচ্ছে, এখন এভাবে একা থানায় যাওয়া যাবেনা। 

বিপদ যে কোনো মূহর্তেই হয়ে যেতে পারে। 

দোকানদারকে বলে দিলাম আজ রাতের মধ্যে আমার এক বান্ডিল চিকন সুতা,একটা টি নের ড্রাম, আর এক টুকরা লোহা চাই। 

আর কথাগুলো একেবারেই গোপনীয়, কোনো একটা মশা মাছি ও যেন জানতে না পারে। যদি কোনো গড়বড় হয় তাহলে সোজা জেলে আজীবনের জন্য। 

-ঠিকাছে স্যার। 

থানায় ফোন দিলাম দুইজন পুলিশসহ গাড়ি পাঠানোর জন্য। 

     রফিকের ফোন পেয়ে তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলাম,

 -হ্যাঁলো স্যার বাসার বাহির থেকে বারবার কলিংবেল বাজাচ্ছে, দরজা খুলছিনা দেখে জোরেশোরে ধাক্কাচ্ছে। 

আপনি এক কাজ করেন, বাসার নিচে কোনো দোকানদারকে ফোন দিয় বলেন আপনার বাসায় কিছু দিয়ে যেতে। 

- জ্বি। 

তাড়াতাড়ি। 

তাহলে কি রফিক ও ফেঁসে যাচ্ছে?

না এটা কখনো হতে দেওয়া যাবে না। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এ কেসের কোনো একটা সুরাহা তো করতেই হবে। না হলে তার পরিবার বড় কোনো দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। 

আমি অঙ্ক মেলানোর চেষ্টা করলাম ,

প্রথমে ধর্ষণ তারপর বীভৎস ভাবে খুন, থানার ওসি, পুলিশ সবাইকে নানাভাবে হুমকি ধমকি যাতে করে কেসের ফাইলটা ওপেন করা না হয়। 

পূর্বের ওসি একটু ঘাটাঘাটি করতেই তার বড় মেয়েকে ও হত্যা করা হয়। 

  সবগুলো সূত্র এক সূতায় গাঁথা ,

কাঠি নাড়ছে একজন, সেই সবকিছুর গডফাদার। 

ওকে ধরলেই থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে,

তবে ওকে ধরাটা এতো সহজ হবেনা, অনেক বাধাবিপত্তি তো হবেই তার সাথে হতে পারে আরো দু'একটা খুন। 

  না না না;!

 অন্তত আমি যতদিন এই থানায় আছি আর একটা খুন ও হতে দেওয়া যাবে না। 

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে গাড়ি এসে পড়েছে টেরই পেলাম না। 


    আমি রফিকের বাসার দিকে রওনা দিয়েছি। বারবার তিন তরুণীর হত্যার ভয়াল বর্ণনা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, আর তার সাথেসাথে একটা গুম ও চারটা হত্যার

প্রতিশোধ...

            (চলবে)