কেস_নং_৯৯৯
#পর্ব_৮_অন্তিম_পর্ব
হ্যালো.. আসফাক, আসফাক
- কিরে তুই এত্ত তাড়াতাড়ি ভুলে গেছিস। পূর্বের কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলাম।
আসফাক কোথায়? প্লিজ আসফাককে কিছু করবেননা।
প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
আমি মোবাইলের ভিতর জোরে জোরে চড় থাপ্পড়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি,
বুঝতে পারলাম আসফাককে প্রচুর মারধর করা হচ্ছে।
- ধর, আসফাকের সাথে কথা বল ;।
হ্যাঁলো আসফাক..
-স্যার আপনি ভয় পাবেন না,
স্যার আপনি ওদের কথায় কান দিবেন না। আমার কিচ্ছু হয়নি স্যার, আমি সম্পূর্ণ ঠিক আছি।
হটাৎ একটি জোরে আওয়াজ শুনতে পেলাম, এরপর আর কোনো আওয়াজ শুনতে পেলাম না, সবকিছু যেন হটাৎ নীরব নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
শরীরের শেষ সম্বলটুকু ও যেন হারিয়ে যাচ্ছে আমার থেকে।
রফিককে বললাম,
নাম্বারটা ট্রেস করার জন্য।
রফিক আমাকে জানালো-
স্যার, নাম্বারের লোকেশন দেখাচ্ছে বংশাল হাইওয়ে রোডের উপর।
রফিককে বললাম,
ওরা কোন দিকে যাচ্ছি?
- স্যার, ওরা বংশাল হয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছে ।
রফিক তুমি তাড়াতাড়ি গাড়ি বের কর।
আমি থানায় ফোন দিলাম-
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চার পাঁচজন পুলিশ পাঠানোর জন্য,
হাতে সময় একেবারে কম, যা করতে হবে ভেবেচিন্তে করতে হবে, ওদের নেক্সট টার্গেট আমি আর রফিক।
আমাকে নিয়ে আমার এতো টেনশন হচ্ছে না,
টেনশন হচ্ছে রফিককে নিয়ে, কারণ যদি ওর কিছু হয়ে যায়, তাহলে ওর স্ত্রী হারাবে একজন সৎ স্বামী , ওর ছেলেমেয়ে হারাবে একজন আদর্শ বাবা, আর দেশ হারাবে একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসার, যে কিনা দিনরাত একত্র করে দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
আর আমাকে তো আমি অনেক আগেই দেশের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছি,
দেশের সার্থে প্রাণ দেওয়ার জন্য আমি এখন সদাসর্বদা প্রস্তুত , কারণ এটা আমি ভালো করেই জানি,
এই কেসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছি আমি, যে কোনো মূহর্তে আমার শ্রদ্ধেয় মা হারাতে পারে তার প্রাণপ্রিয় একমাত্র সন্তানকে।
স্যার গাড়ি রেডি ,
রফিকের ডাক শুনে দৌড়ে নিচে নামলাম,,।
রফিককে বললাম -
-রফিক সোজা গাড়ি নিয়ে বংশালের দিকে চলো, আর একটা কথা মনে রাখবে,আমরা কিন্তু হাইওয়ে রোড হয়ে যাচ্ছি না।
- তাহলে স্যার, আমরা কোন রোডে যাচ্ছি?
আমাদের এখন বাই রোডে এগুতে হবে, এছাড়া আর কোনো উপায় ও আমাদের কাছে নেই।
রফিক বললো..
- স্যার ওরা বংশাল রেললাইন অতিক্রম করে জগৎপুর জেলা শহরের দিকে যাচ্ছে।
রফিক গাড়ির স্পিড আরো বাড়াতে হবে,নাহলে আমাদের বিরাট বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
আর জগৎপুর পৌছাতে আমাদের কতক্ষণ সময় লাগবে?
- স্যার সর্বোচ্চ ত্রিশ মিনিট।
রফিক তাড়াতাড়ি...।
আমি রিভলভারটা চেক করে নিলাম,
এর আজ বড় কাজ আছে।
আমার মোবাইলটা রেখে দিলাম ডান পায়ের জুতার ভিতর,আর বাম পায়ের জুতার ভিতর রেখে দিলাম ব্যাগে থাকা ধারালো চিকন চাকুটা।
এ কয়েকদিনে আসফাকের প্রতি একটা অদৃশ্য মায়া জন্মে গেছে তা আর কখনো কারো প্রতি জন্মেনি।
এ যাত্রায় আসফাকের জন্য মনটা আরো একবার কেঁদে উঠলো।
ছেলেটা আসলেই অনেক জিনিয়াস, অল্পতেই অনেক কিছু করে ফেলার ক্ষমতা ওর আছে,,
ওর তীক্ষ্ম মেধা মাঝেমাঝে আমাকেও চমকে দেয়।
স্যার আমরা ওদের অনেক কাছাকাছি চলে এসেছি,,
আর কতক্ষণ?
-ওদের লোকেশন অনুযায়ী পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওদের কাছে পৌঁছে যাবো।
কিন্তু স্যার, প্রবলেম তো অন্য জায়গায়।
কিসের প্রবলেম ?
- স্যার লোকেশন তো সোজা রাস্তা দেখাচ্ছে না,
বাঁয়ে এসে ডান দিকের জঙ্গলটার মধ্যে দেখাচ্ছে ।
চিন্তা করে দেখলাম,
হেঁটে যাওয়ার চেয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়াটাই বেশি নিরাপদ।
আচ্ছা রফিক ,আমার মনে হচ্ছে গাড়ি দিয়ে যাওয়া ই বেশি শ্রেয় ।
- জ্বি স্যার।
জঙ্গলের ভিতর গাড়ি ঢুকবে?
- মনে হচ্ছে তো ঢুকবে,(রফিক বললো)
কোমরে থাকা N50 রিভলভারটা হাতে নিয়ে চারপাশটায় নজর বুলালাম,,
রফিক সন্দেহজনক তেমন কিছু চোখে পড়ছেনা।
গাড়ি নিয়ে আমরা এগুতে পারি।
- ওকে।
কিছুক্ষণ পর রফিক বললো-
-স্যার সামনে জঙ্গলের ভিতর অস্পষ্ট কিছু একটা দেখা যাচ্ছে!
গড়ি স্টপ স্টপ ,,
সামনে আর এক কদম ও আগানো যাবেনা।
রফিককে বললাম-
তুমি গাড়িতে থাকো।
আমি একজনকে নিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছি,
সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লে আমি ওয়ারলেসের মাধ্যমে সংকেত দিবো,
সাথে সাথে বাকিদের নিয়ে তুমি চলে আসবে,
তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে,
কোনোভাবেই শুট করা যাবে না।
আমি অপরাধীদেরকে জীবিত চাই।
- জ্বি স্যার। কিন্তু আপনি একাএকা?
রফিক কোনো সমস্যা নাই, আস্থা রাখো আমার উপর, আর নিজেদের মনোবল আরো শক্ত করো।
-ওকে,
রফিকের গলাটা ফ্যাকাসে ফ্যাকাসে শুনালো।
আমি পূর্ণ সতর্কতার সহিত সামনের দিকে এগুচ্ছি,
মস্তিষ্ক আর হাত একসাথে কাজ করছে,
নিজেকে বলছি,
জাকারিয়া আজ আর কোনো ভুল করা চলবে না,
তাহলে ভুলের মাশুল হবে অকল্পনীয়।
যত সামনের দিকে এগুচ্ছি তত সামনে থাকা অস্পষ্ট জিনিসটা স্পষ্ট হচ্ছে,,।
দেখতে পেলাম একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার।
আশেপাশে গ্রেনেড বা পুতে রাখা মাইনের কথা চিন্তা করে মাথায় হেলমেটটা পরে নিলাম।
গাড়ির চাকার দাগ দেখে একবারে নতুন মনে হলো,,
গাড়ির কাছাকাছি গিয়েই গাড়ির বডিতে দুই রাউন্ড গুলি খরচ করে ফেললাম,
পাল্টা কোনো রি- অ্যাকশন না দেখে গাড়ির সামনের দিকে এগুলাম।
গাড়ির ভেতরটা সম্পূর্ণ অন্ধকার, তাই
কিছুই দেখা যাচ্ছেনা।
আমি একহাতে রিভলভারটা গাড়ির দরজা বরাবর তাক করে নিলাম,
অন্য হাতে টান দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ফেললাম,
অমনি আমার সামনে এসে পড়লো এস আই আসফাকের দ্বি- খন্ডিত মাথা,
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম,
মনে হচ্ছে অজানা এক আতঙ্ক আসাকে গ্রাস করে ফেলছে, শরীরের অঙ্গ-পতঙ্গগুলো অকেজো হয়ে যাচ্ছে,,
হটাৎ পিছন থেকে প্রচন্ড জোরে স্টি লের পাইপের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম,
আমিও জুতার ভিতরে থাকা চাকুটা মুখোশধারী ব্যক্তির বুক বরাবর গেঁথে দিলাম,
আর আমার পাশে পড়ে থাকতে দেখলাম,
সাথে আসা পুলিশ সদস্যের ক্ষতবিক্ষত শরীর।
হাত তালির শব্দ শুনে যন্ত্রণামুখর শরীর নিয়ে পিছনে তাকালাম,
ঝাপসা ঝাপসা ভাবে দেখতে পেলাম-
রফিকের হাত-পা, মখ বাঁধা অবস্থায় আমার দিকে টেনে নিয়ে আসা হচ্ছে,,
কিন্তু আরো একবার প্রচন্ড জোরে আঘাতের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।
কিছুক্ষণ পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম গাড়ির ভিতর,
আমার হাত-পা সিটের সাথে শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধা।
চোখদুটি কাপড় দিয়ে মোড়ানো
যন্ত্রণায় মাথা ঝিমঝিম করছে, পিপাসায় মনে হচ্ছে আমার হ্রদপিন্ডটা ছিঁড়ে যাচ্ছে ।
অস্পষ্ট আওয়াজে পানি চাওয়া মাত্রই জোরে জোরে আমাকে চার পাঁচটা থাপ্পড় মারা হলো।
একজন বলে উঠলো-
বস, বজ্জাতটা পানি চাইতাছে...।
ওরে পানি দিমু?
-খবরদার-ওরে পানি দিবি না। ওরে তিলেতিলে কঙ্কাল বানিয়ে আমি মারমু,,
শালা* আমারে অনেক নাকানিচুবানি খাওয়াইছে।
প্রতিটি কথাই নিক্ষেপিত তীরের মতো আমার বুকে আঘাত হানছে,।
কিন্তু এখন কিছুই করার নেই আমার,
শুধু করতে হবে অপেক্ষা...।
কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিছুই অনুধাবন করতে পারছিনা।
পিছনের স্মৃতিপটে কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করলাম-
আমি যখন একজনকে নিয়ে জঙ্গলের ভিতর যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন রফিককে বলেছিলাম-
আমার কোনো প্রবলেম হলে, ওয়ারলেসের মাধ্যমে সংকেত দিবো।
আমার স্পষ্ট মনে আছে,
যখন আমরা হামলার শিকার হই,
তখন আমার পিছনে থাকা পুলিশ সদস্য মাহবুব বারবার বলছে-
স্যার আমরা ফেঁসে গেছি, আমাদের সাহায্য দরকার।
কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো ধরনের উত্তর দেওয়া হয়নি,
এমনকি আমাদেরকে সাহায্যও করা হয়নি।
বিষয়টা অনেকক্ষণ যাবৎ আমাকে ভাবিয়ে তুলছে।
গাড়ি চলছে,,
কারো মুখে কোনো কথা নেই।
কোমরে থাকা রিভলভার অনেক আগেই চিনিয়ে নেওয়া হয়েছে,
তবে ডান পায়ের জুতার ভিতরে থাকা মোবাইলটা মনে হচ্ছে এখনো আপন জায়গায় বিদ্ধমান।
সামনে কার যেন ফোন বেজে উঠলো-
কথা শুনা যাচ্ছে..
- হ্যালো ভাই,
শিকার আমাদের ফাঁদে আটকা পড়েছে,
আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন , আমরা কাছাকাছি চলে আসছি।
কথা শুনে বুঝতে পারলাম-
আমাদের যাত্রা কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হতে যাচ্ছে,।
গাড়ি থেমে গেলো,
আমাকে আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে নামানো হলো।
মুখোশের কারণে আশেপাশে কিছুই দেখতে পারছিনা।
তবে চারদিকে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলাম-
কোনো একটা জঙ্গলের ভিতর আমাকে আনা হয়েছে।
আমার দুইপাশে দুইজন শক্তকরে ধরে সামনে দিকে নিয়ে যাচ্ছে,
মনেমনে ভাবছি,
তাহলে কি তীরে এসে তরী ডুবে গেলো!
আজকের পর কি কেস:৯৯৯ আজীবনের জন্য সমাদ্রিত হয়ে যাবে নাম না জনা কোনো এক জঙ্গলের মাঝে??
পূর্ব পরিচিত কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে চমকালাম না।
কারণ আগ থেকেই জানি শেষ পর্যন্ত এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো,,।
স্বাগতম স্বাগতম,,
ওসি সাহেব-
শেষ পর্যন্ত আমার রাজ্যে এসে পড়লেন।
কোনো একজনকে বললো-
- ওসি সাহেবের মুখোশটা খুলে দে।
আজ একটু সরাসরি কথা বলবো।
অবশেষে আমার মুখোশ খুলা দেওয়া হলো,
সামনে বসে আছে আমার খুবই পরিচিত মুখ..?
রফিক..!
একমূহর্তের জন্য নিথর, নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম।
কথা বলার শেষ শক্তিটুকু ও যেন হারিয়ে ফেললাম,।
রফিকের শয়তানিমিশ্রিত হাসি চারদিক ভারী করে তুলছে।
ওসি সাহেব খুবই অবাক হচ্ছেন না?
সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ।
আমি এই দিনটার অপেক্ষাই এতদিন ধরে করছি।
অবশেষে মুখোমুখি হয়ে গেলাম।
রফিক আমার সাথে এতো বড় বেইমানি করবে তা কখনো কল্পনা করিনি।
আজ আমি ও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার,।
এখান থেকে বের হওয়ার ও কোনো রাস্তা নেই,
আর আমি একা একা কিছু করতেও পারবো না।
তাহলে প্রথম দিন তুই ই আমাকে মেসেজ করেছিলো?
-ওসি সাহেব আমার কথা শুনলেন না,
শুনলে আজ এ অবস্থা হতো না।
ঘৃণায় আমার রফিকের দিকে তাকাতেও মন চাচ্ছেনা,
তাহলে আমি এতদিন দুধকলা দিয়ে বেইমান পুষেছি।
আস্তে আস্তে আসার সামনে এসে বসলো আরো দুইজন।
এসেই একজন বললো-
ওসি ঐদিন ফোন দিয়ে তো তুই আমাকে ভয় লাগাইয়া দিছিলি।
বুড়োর মুখের দিকে এক পলক তাকালাম,
একটু দেরিতে হলেও চিনতে পারলাম-
ওনিই চন্ডীপুর খানার সাবেক ওসি,,! পাশেরটাকে অপরিচিত মনে হলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম-
আসফাককে কেনো হত্যা করলি?
- ও আমাদের প্ল্যানের মধ্যে বারবার বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছিলো, তাই ওকে সরিয়ে লাইন ক্লিয়ার করে নিলাম, (রফিক বললো )
কথা না বাড়িয়ে আবারো পানি চাইলাম,।
- এই একটু পানি দে রে?
শত হলেও আমাদের অফিসার ( ব্যাঙ্গাত্বকভাবে)
অপরিচিত লোকটা বললো-
ওরে এখন কি করমু?
রফিক বললো-
ওরে খতম করে খেলাটা এখানে ক্লোজ করে দিতে হবে।
দেরি করলে শালা* আবার কোন ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে,
আমি জানি যদি আমার নাম্বার ট্রেস করা হয় , তাহলে আমাকে পেয়ে যাবে,
তাই সময় পাস করার চেষ্টা করলাম।
আমি বললাম-
তোরা যদি এখন আমাকে মেরে ফেলিস,
তাহলে তোরা সবগুলা ধরা খেয়ে যাবি,,।
সাবেক ওসি বলে উঠলো-
-ওসি তুই খুব টেলেন্ট রে!
তুই সময় পাস করে আমাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছিস।
রফিক শুট, তাড়াতাড়ি?
এমনসময় একজন বলে উঠলো-
বস পুলিশ, পুলিশ!
রফিক বিলম্ব না করে আমাকে গুলি করলো,
আমি তৎক্ষণাৎ বাঁধা হাত-পা নিয়ে পাশে জাম্প দিলাম,
তারপরও বুলেট আমার হাতের বাহু ভেদ করে দিয়েছে।
সারা রুম পুলিশ সদস্যে ভরে গেছে ,
বারবার ঘোষনা করছে আত্মসমর্পণ করার জন্য।
কিন্তু ওরা তিনজন আমার দিকে বন্দুক তাক করে আছে, আর পুলিশ সদস্যদেরকে বলছে-
যদি সামনে আর এক কদম এগুনোর চেষ্টা করা হয়,
তাহলে আমাকে সরাসরি উপরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে,,
কথা শেষ হওয়ার আগেই সমস্ত রুম অন্ধকার হয়ে গেলো,
তারসাথে সাথে সামান্য গোলাগুলি ও।
বুঝতে পারলাম ওদের খেল খতম হয়ে গেছে।
কতক্ষণ পর মাহবুব এসে আমাকে বললো -
স্যার আপনি সম্পূর্ণ সেভ আছেন ।
মাহবুব আমার হাত- পায়ের দড়ি খুলে দিলো।
আমরা থানার পথে যাচ্ছি ,
সাথে চার প্লাটুন পুলিশ সদস্য। আমি ছাড়া কারো কোনো মারাত্বক জখম হয়নি,
সবার মুখে বিজয়ের মুচকি হাসি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম -
তোমরা কিভাবে আমি পর্যন্ত পৌঁছলে?
স্যার আপনার মোবাইলের জিপিএস চালু ছিলো,
আমরা এর লোকেশন অনুযায়ী চলে এসেছি।
গুড, ভেরি গুড..।
আমি সবাইকে বললাম -
অপরাধীর প্ল্যান যতই নিঁখুত হোক না কেন কোথাও না কোথাও একটু খুঁত থেকেই যায় ।
-তাদের সম্মতি দেখে মনে হলো, কথাগুলোর মর্মার্থের সাথে তারা অনেক আগ থেকেই পরিচিত।
রেকর্ড খাতা নিয়ে বসে আসি পোষা গাদ্দারদের সামনে।
আমি প্রথমে জিজ্ঞেস করলাম-
কেনো ধর্ষণ করেছিলি তোদের মেয়ে সমান মেয়েগুলোকে?
- স্যার,
নো স্যার , তোদের মুখে স্যার শব্দটা শুনে নিজেকেও অপরাধী মনে হয়।
বল..
আমরা একটা কেসের কাজে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম,
তখনি তিন তরুণীর উপর আমাদের নজর পড়েছিলো।
পরেই থানায় থাকা চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে চুক্তি হয়ে যায়,
সে মেয়েগুলোকে তুলে ইটখোলায় তুলে এনে আমাদেরকে ফোন দিবে, আমরা সময়মত ইটখোলায় পৌঁছে যাবো।
পরবর্তীতে আমরা তাকে ছেড়ে দিলে সে ঠিক তিনদিন পর আমাদেরকে ফোন করে বলে সকল কিছু রেডি আছে,
এখন শুধু কাজ শেষ করে ফেললেই হয়।
তারপর আমরা গিয়ে...?
তারপর এতো বীভৎসভাবে হত্যা করলি কেন?
- যাতে করে সন্দেহের তীরটা কখনো আমাদের দিকে না আসে।
ওসির মেয়ে হত্যা, তোর বাসায় আগুন, তোর মেয়ের শরীর পুড়ে যাওয়া, ইটখোলায় মোবাইল পাওয়া , এসব কি ছিলো?
- ওসির মেয়ে হত্যা,
এটা একটা নাটক ছিলো মাত্র, আমার বাসায় আগুন আমিই লাগিয়েছিলাম ,আর ইটখোলায় মোবাইল আমিই রেখে এসেছিলাম যাতে করে সন্দেহ যায় ওসির মৃত মেয়ের উপর।
আমি বললাম-
কচুরিপানার নিচে যে লাশ পাওয়া গেছে সেটা?
-ওটা ছিলো পাশের এলাকার কবর থেকে তোলা সদ্য মৃত্যুবরণ করা তরুণীর লাশ।
ওদের ভয়ংকর প্ল্যানের কথা শুনে আমি একেবারে চুপসে গেলাম ।
আমাকে ফোনে ধোমকি দিতো কে?
- ইলিয়াস( চেয়ারম্যানের ছেলে)।
আমি তাদেরকে বললাম-
তোরা দেশ ও জাতির কলঙ্ক, তোরা মুখোশধারী বেইমান,
তোরা কলঙ্কিত করেছিস পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে,,
মনের স্বাদ মিটিয়ে ইচ্ছামত সারারাত টর্চার করলাম ।
১০০০ নাম্বার কেসের ফাইলটা ওপেন করলাম কিছু মুখোশধারী বেইমানদের বিরুদ্ধে,
যারা দেশের খায়, দেশের পরে অথচ বেইমানী করে দেশের জনগণের সাথে।
রাতেই মামলার কপিটা পাঠিয়ে দিলাম জেলাকোর্টে,
তার সাথে সাথে গাদ্দার গুলাকেও।
সকালে বাসায় এসে ড্রেস চেন্জ করে একটু হালকা নাস্তা করলাম।
হাতে লাগানো পট্টি খুলে ড্রেসিং করে নিলাম,
তারপর তিনদিনের ঘুমবিহীন শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দিলাম,
এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো -
ফোন রিসিভ করলাম।
-হ্যাঁলো কে?
আমি এসপি নওয়াজ মোল্লা।
- জ্বি স্যার।
আপনার প্রমোশন হয়েছে, আপনি সকাল সকাল আমার সাথে দেখা করবেন ।
-জ্বি স্যার।
দেরী না করে মাকে ফোন দিয়ে বললাম -
" মা " ছেলের তো বয়স হয়েছে,
মেয়ে দেখা শুরু করো না ছেলের জন্য...
(সমাপ্ত )
লেখক_জাকারিয়া_শহীদ
(যারা গল্পের সবগুলো পর্বে আমার সাথে ছিলেন,
আপনারা ছোট্ট করে একটা গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।
আপনার অনুপ্রেরণা আমাকে অনুপ্রাণিত করবে সামনে লিখার জন্য)
0 Comments
💬✨ মন্তব্য করার নিয়মাবলী ✨💬
🙏😊 দয়া করে ভদ্র ভাষায় মন্তব্য করুন।
🚫❌ অপ্রাসঙ্গিক বা স্প্যাম মন্তব্য প্রকাশ করা হবে না।
💡💖 আপনার মতামত আমাদের জন্য খুবই মূল্যবান।
📚✍️ গল্প নিয়ে আপনার চিন্তা, অনুভূতি বা প্রস্তাব লিখে জানাতে পারেন।
🌟🌍 চলুন আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করি।
ধন্যবাদ! 💝🌸🎉